ঋণের টাকায় ঋণ শোধ সরকারের

জিয়াদুল ইসলাম
০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ঋণের টাকায় ঋণ শোধ সরকারের

বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় গত দুই মাসে সরকারের ব্যাংকঋণের চাহিদা কমেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, তার সিংহভাগই আগের ঋণ পরিশোধে ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৬৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া আগের ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৪ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, তিনটি কারণে সরকারের ব্যাংকঋণের চাহিদা কমেছে। প্রথমত: উন্নয়ন কর্মকাণ্ড একপ্রকার বন্ধ আছে দ্বিতীয়ত: বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ সহায়তা আসছে। তৃতীয়ত: সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে বেশি ঋণ মিলছে। এর বাইরে সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সামনে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে বলে জানান তিনি। 

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে সরকারের ব্যাংকঋণ এবার বাণিজ্যিক ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়েছে। তবে বরাবরই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ এতে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ থেকে বঞ্চিত হয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে অনেক ব্যাংক। এতে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মত দেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। যা ৩০ ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম চার মাসে যার পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে গত দুই সরকারের ঋণ বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। অন্যদিকে গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা টাকা। সে হিসেবে এবার ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৩৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা।

এদিকে এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন ঋণ করেনি সরকার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি। গত ৩০ ডিসেম্বর শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। এই ছয় মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকার উল্টো ঋণ পরিশোধ করেছে ৫৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণকে টাকা ছাপানো হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে আলোচ্য ছয় মাসে এই পরিমাণ টাকা ছাপানো ঋণের স্থিতিও কমেছে। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকারের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। 

তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে সরকারের নিট ঋণ স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম চার মাসে নীট ঋণের স্থিতি ছিল ১৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ছিল প্রায় ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। 

চলতি অর্থবছর ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত এর বিপরীতে সরকার নীট ঋণ নেয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।