ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তায় হাত ছিল টিউলিপের

আমাদের সময় ডেস্ক
০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তায় হাত ছিল টিউলিপের


২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলির ছেলে ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসেমকে তার নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। তিনি ব্যারিস্টার আরমান হিসেবেও পরিচিত। ২০১৭ সালে আরমানের গুম সংক্রান্ত বিষয়ে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক টিউলিপ সিদ্দিককে প্রশ্ন করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে টিউলিপ পরবর্তীতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে ঢাকায় আরমানের স্ত্রীকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হেনস্তা করান বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে ব্যারিস্টার আরমানের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিখোঁজ আরমানের ব্যাপারে ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপকে প্রশ্ন করেছিলেন ব্রিটিশ গণমাধ্যম চ্যানেল-৪ এর এক সাংবাদিক। টিউলিপ যেহেতু ব্রিটেনের নাগরিক ও তখন এমপি ছিলেন। ওই সাংবাদিকের ধারণা ছিল যে, এ বিষয়ে শেখ হাসিনার কাছে একটি ফোন করলে আরমান হয়তো মুক্তি পেতে পারেন।

ওই সাংবাদিক টিউলিপকে বলেন, ‘আপনার একটি ফোন কল আরমানের মুক্তিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’ তবে এই অনুরোধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান টিউলিপ। তিনি বলেন, ‘আরমান কি আমার সংসদীয় আসনের কেউ? তিনি কি ব্রিটিশ নাগরিক?’ সাংবাদিক উত্তর দেন, ‘আরমান বাংলাদেশি। তার পরিবার আপনাকে বারবার অনুরোধ করেছে কিছু করার জন্য।’ টিউলিপ পাল্টা জবাব দেন, ‘আপনি কি জানেন আমি ব্রিটিশ এমপি এবং আমার জন্ম লন্ডনে?’ চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আপনার গভীর সম্পর্ক আছে। আপনার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ ওই মুহূর্তে টিউলিপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি কী বলতে চান আমি বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ? আমি ব্রিটিশ এমপি। আমাকে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ বলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।’ এই কথোপকথনের তিন দিন পর ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় চ্যানেল-৪ প্রতিবেদনটি সম্প্রচার করে।

ব্যারিস্টার আরমান জানিয়েছেন, চ্যানেল-৪ প্রতিবেদনটি প্রচারের কয়েক ঘণ্টা আগে র‌্যাব সদস্যরা তার বাড়ি ঘিরে ফেলেন। তারা তার স্ত্রীকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন এবং বিদেশে কার সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে, তা জানতে চান। আরমানের ভাষায়, তার স্ত্রীকে এমনভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল যেন তিনি কোনো সন্ত্রাসী।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, টিউলিপের এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার কারণে শেখ পরিবারে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তার জেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরমানের পরিবারকে হেনস্তা করে। টিউলিপের সহযোগীদের একজন জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে টিউলিপ ব্রিটেনের ফরেন অফিসে আরমানের বিষয়ে একটি পত্র পাঠান। এ বিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার দল লেবার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কেউই কোনো কথা বলেননি।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ আট বছর নিখোঁজ থাকার পর গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাড়ি ফেরেন ব্যারিস্টার আরমান। ওই সময় জানা যায়, এতদিন তাকে হাসিনার গোপন কারাগার ‘আয়নাঘরে’ বন্দি রাখা হয়েছিল। ব্যারিস্টার আরমান লন্ডনে পড়ালেখা করেছেন। ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বাবার বিচার চলাকালে তিনি তার আইনজীবীর ভূমিকা পালন করছিলেন। ঠিক তখনই তাকে গুম করা হয়।