সভাপতি পদে সদস্য, সদস্য পদে চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগের জন্য গঠিত সিলেকশন কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলোচ্য কমিটিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে সদস্য বানিয়ে সভাপতি হয়েছেন পর্ষদের আরেকজন সদস্য। এটাকে পর্ষদ চেয়ারম্যানের যোগ্যতা, কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এ ধরনের ঘটনার নজির তখনই দেখা যায়, যখন চেয়ারম্যানের চেয়ে পরিচালকরা বেশি ক্ষমতাধর হন। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন না বা তাকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয় না। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের শেয়ার বেশি হওয়ার কারণে ব্যাংকটিতে প্রতিনিধি পরিচালকরা প্রভাব বিস্তার করছেন।
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবলুপ্ত বাংলাদেশ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (বিসিআইএল) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি। পরে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে ১৯৯৯ সালে এটি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক নামে
কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকটিতে ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকারি খাতের ব্যাংক ও সরকার। বাকি শেয়ারের সিংহভাগই চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের দখলে। গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে এস আলমমুক্ত করা হয়। এতে নতুন করে পরিচালক করা হয়- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আতাউর রহমান (স্বতন্ত্র পরিচালক), মেঘনা ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিন মিয়া (স্বতন্ত্র পরিচালক), অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব কামরুল হক মারুফ, জনতা ব্যাংক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম মরতুজা এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট শেখ আশ্বাফুজ্জামান (স্বতন্ত্র পরিচালক)। পরে আতাউর রহমানকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা যায়, গত ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩৯৬তম সভায় ব্যাংকের সামগ্রিক কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (চুক্তিভিত্তিক) নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরুল হক মারুফকে সভাপতি কর ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সিলেকশন তথা সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অপর সদস্যদের মধ্যে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমানকেও রাখা হয়। অন্য তিন সদস্য হলেন- পর্ষদ সদস্য মো. মহসিন মিয়া, মো. গোলাম মরতুজা ও শেখ আশ^াফুজ্জামান এফসিএ।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ব্যাংকের পর্ষদ হচ্ছে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বা বডি। সেই বডির চেয়ারম্যান হচ্ছেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অথচ সেই ব্যক্তিই পর্ষদের কোনো সদস্যের অধীনে সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন।
এ বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ডিএমডি নিয়োগে সার্চ কমিটির সভাপতি কামরুল হক মারুফ বলেন, একটি ব্যাংকে অনেক কমিটি থাকে। পর্ষদ চেয়ারম্যান সব কমিটির প্রধান হিসেবে থাকেন না। সেখানে পর্ষদের সদস্যদের মধ্য থেকে কমিটির সভাপতি করা হয়। ডিএমডি নিয়োগের কমিটির ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সার্কুলারের ব্যত্যয় হলে সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু তা তো হয়নি। সেটি হলে আমাকে বলতে পারেন।
সার্চ কমিটিতে সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে ওই কমিটিতে ছিলেন না বলে দাবি করেন। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, আমরা কোনো সার্চ কমিটি করি নাই। আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থীদের থেকে আবেদন আহ্বান করি। এরপর আবেদন জমা পড়লে একটা কমিটি করি প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের জন্য, সেটায় আমি ছিলাম না। কিন্তু আপনাদের পর্ষদের ম্যামোতে আপনার নাম রয়েছে- এ প্রশ্ন করতেই বলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিও ছিলাম। তবে কিছু নিয়ম আছে। কমার্স ব্যাংকে সরকারের শেয়ার বেশি। এ কারণেই পরিচালকদের থেকে একজনকে কমিটির সভাপতি করা হয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এদিকে সার্চ কমিটি ইতোমধ্যে ডিএমডি নিয়োগে একজনকে চূড়ান্ত করে নিয়োগপত্র ইস্যু করেছে। তিনি হলেন- স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ট্রেড ফাইন্যান্স ডিভিশনের প্রধান আবু রুশদ ইফতেখারুল হক। তবে ওই কর্মকর্তা এখন কমার্স ব্যাংকে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে পর্ষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, যাকে আমরা নিয়োগপত্র দিয়েছিলাম, তিনি না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আপাতত আমরা আর ডিএমডি নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছি না। কারণ আমাদের নতুন এমডি শিগগিরই যোগদান করবেন। উনি যোগদানের পর ডিএমডি নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। আগামী ১৬ জানুয়ারি তার যোগদানের কথা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিও মিলেছে।
সূত্র বলছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ওই কর্মকর্তাকে কমার্স ব্যাংকে এ মূহূর্তে যেতে না দেওয়ার পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকও। কারণ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় এসআইবিএলে যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোতে ওই কর্মকর্তারও দায় থাকতে পারে। এ জন্য তাকে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের অনাপত্তি সাপেক্ষে অন্য ব্যাংকে যেতে হবে। কিন্তু পর্ষদও তাকে যেতে দিতে চাচ্ছে না।