কী এই এইচএমপিভি ভাইরাস?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮:০৭
শেয়ার :
কী এই এইচএমপিভি ভাইরাস?

করোনাভাইরাসের পর বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস’ বা (এইচএমপিভি)। করোনার মতো এবারও চীনে প্রথম শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই ফুসফুস সংক্রমণের সঙ্গেই এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।  

বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এইচএমপিভি সম্ভবত বহু শতক ধরে রয়েছে এবং প্রায় সব মানুষই তাদের জীবনে অন্তত একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।  

২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে একদল গবেষক এইচএমপিভিকে চিহ্নিত করেন। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। সম্প্রতি চীনের ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ ডিসিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, তারা নিউমোনিয়া আক্রান্তদের ক্ষেত্রে একটি নতুন প্রোটোকলের পরীক্ষা করছে। এরপরই এইচএমপিভি নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন হন।

চীনের সরকারি মিডিয়া সিসিটিভি-তে প্রচারিত সাংবাদিক সম্মেলনে চীনের স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, শীতের মৌসুমে বেশ কয়েকটি সাধারণ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ যেন এর মোকাবিলায় অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধের উপর নির্ভর করেন।

বর্তমানে চীনে যে এইচএমপিভি সংক্রমণ হয়েছে, তা চেনা ও ভালোভাবে জানা ভাইরাসের সংক্রমণ, যা গত কয়েকশ বছর ধরে মানুষকে সংক্রামিত করছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এইচএমপিভি ভাইরাস উত্তর চীনে বাচ্চাদের সংক্রামিত করছে। প্রচুর বাচ্চা এর ফলে অসুস্থ হয়েছে। তাছাড়া সাধারণ সর্দির কারণ রাইনোভাইরাসে সংক্রমণের পরিমাণও অনেকটাই বেড়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিনডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগ বিশেষজ্ঞ জ্যাকলিন স্টিফেন্স বলেছেন, ''শীতের সময় এই সংক্রমণ খুবই সাধারণ ঘটনা। শিশুরা যে বেশি করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, সেটাও নতুন কোনো ঘটনা নয়। সাধারণত এই ভাইরাসে সংক্রমণের ফলেই শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হয়।''

ফ্লিনডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক বিশেষজ্ঞ জিন কার বলেছেন, ‘করোনার তুলনায় চীনে এইচএমপিভি-র প্রাদুর্ভাব একেবারেই আলাদা ঘটনা। করোনা ভাইরাস একেবারেই নতুন ভাইরাস ছিল। মানুষের শরীরে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না।’

এইচএমপিভি হলো রেসপিরেটরি সিনসিয়া ভাইরাস(আরএসভি) পরিবারভুক্ত ভাইরাস। এর ফলে স্বল্পস্থায়ী সংক্রমণ হয়। আরএসভির মতো এইচএমপিভিও শীতের সময় হয়, তা দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।

২০০১ সালে ২১টি ডাচ শিশুর সংক্রমণের পর গবেষকরা এইচএমপিভি-কে চিহ্নিত করেন। এই ভাইরাসকে অনেক সময়ই আরএসভি হিসাবে ভুল করা হয়। কারণ, দুইটি ক্ষেত্রে একই ধরনের রোগলক্ষণ থাকে।

রোমানিয়ার ইরাসমাস মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির অ্য়ালবার্ট ওস্তাহাউস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘পাঁচ বছরের বেশি বয়সিদের শরীরে সাধারণত এইচএমপিভি-র অ্যান্টিবডি থাকে।’ তিনি ও তার সহকর্মীরা গবেষণা করে দেখেছেন, এইচএমপিভি মানুষের দেশে কয়েকশ বছর ধরে আছে।

করোনাভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার তুলনায় এইচএমপিভি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তার মানে এর মিউটেশন খুব তাড়াতাড়ি হয় না। যখন শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমে য়ায়, তখন এর সংক্রমণ বাড়ে।

অ্যালবার্ট বলেছেন, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মিউটেশন খুব বেশি হয়। এইচএমপিভি তুলনায় স্থিতিশীল। আমরা আরএসভি ও এইচএমপিভি-কে ১০-১৫ বছর ধরে দেখছি। তাদের খুব সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন এই ভাইরাসের মধ্যে দেখা যায়নি।’

এইচএমপিভি-র উপসর্গ

আরএসভি-র মতোই এইচএমপিভি-ও শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাব ও নিচের অংশে ছড়ায়। এর ফলে ঠান্ডা লাগা, কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকে।

অন্য ভাইরাসের মতো এইচএমপিভিও সংক্রামক। আক্রান্ত মানুষের হাঁচি, কাশি থেকে বাতাসে বাহিত হয়ে এই ভাইরাস অন্যদের সংক্রমিত করে। তাছাড়া স্পর্শ বা শারীরিক সংযোর কারণেও এই ভাইরাস অন্যের শরীরে যে পারে। যে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ গুরুতর হতে পারে।