‘তাহসান জিতেছে’ বলা ব্যক্তিদের ধুয়ে দিলেন তসলিমা নাসরিন

বিনোদন প্রতিবেদক
০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯:৪০
শেয়ার :
‘তাহসান জিতেছে’ বলা ব্যক্তিদের ধুয়ে দিলেন তসলিমা নাসরিন

জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খানের সঙ্গে রোজা আহমেদের বিয়ের খবর এখন বাংলাদেশে আকর্ষণের শীর্ষে আছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নতুন স্ত্রীর সঙ্গে তাহসানের ছবি দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনার ঝড়। বেশিরভাগ মানুষই তাহসানের সেই স্ট্যাটাস শেয়ার করে ক্যাপশনে কিংবা মন্তব্যের ঘরে লিখছেন, ‘তাহসান জিতেছে’। এমন মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

আজ রবিবার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তসলিমা লেখেন, ‘ফেসবুক ছেয়ে গেছে ‘‘তাহসান জিতেছে, তাহসান জিতেছে’’ রবে। কেন তাহসান জিতেছে, বুঝে পেলাম না। সে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে বা করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেতাজেতির কী হলো! হেটারোসেক্সুয়ালদের বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ থাকে, তারা জীবনের কোনও এক সময় পছন্দসই কাউকে পেলে তার সঙ্গে প্রেম করে, লিভ ইন করে বা তাকে বিয়ে করে। এ তো স্বাভাবিক। জিতলো কেন তাহলে তাহসান?’

ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তসলিমা আরও লেখেন, ‘আসলে যারা জিতেছে জিতেছে বলে চেঁচাচ্ছে; তারা চেঁচাচ্ছে, কারণ তারা মনে করেছে তাহসান এক বাচ্চার বাবা হয়েও, ডিভোর্সী হয়েও একটা ‘‘কচি সুন্দরী ভার্জিন মেয়ে’’ পেয়েছে। মর্ত্যে বসে যত খুশি এবং যেভাবে খুশি নারী ভোগ করার পর স্বর্গে গিয়ে সঙ্গমের জন্য ভার্জিন হুর পেয়ে যাওয়াকে মুসলমানরা ‘‘জিতে যাওয়া’’-ই মনে করে। কিন্তু রোজা আহমেদ রক্ত মাংসের মানুষ, হুর নয়, খুব সম্ভবত ভার্জিনও নয়। রাজকন্যার জীবন তার ছিল না, খুব স্ট্রাগল করেছে জীবনে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে একটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। কঠিন সংগ্রামের দিনগুলোয় নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল বলে, নিজের স্বপ্ন যে করেই হোক পূরণ করতে চেয়েছিল বলে নারীবিদ্বেষী সমাজ রোজাকে কম নিন্দে করেনি, কম অপমান করেনি, কম অপদস্থ করেনি। মিথিলার বিরুদ্ধেও কম কুৎসা রটায়নি এই সমাজ।’

সমাজকে নারীবিদ্বেষী উল্লেখ করে তসলিমা আরও লেখেন, ‘তাহসান জিতেছে, এই নিয়ে সবাই উল্লাস করছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে সব পুরুষই জেতে। সর্বক্ষণ জেতে। তাদের হার নেই। হারতে হয় শুধু নারীকেই। কিন্তু আমি কি মনে করি মিথিলা বা রোজা হেরেছে? না। তারা একটুও হারেনি। তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙ্গে নিজের যোগ্যতায় স্বর্নিভরতা এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছে। নারীবিদ্বেষী সমাজে নারীর জিতে যাওয়ার প্রথম শর্তই এটি। তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না কুৎসা বা নিন্দে, এ জিতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। ভালো না লাগলে তারা তাদের সঙ্গীকে... সে প্রেমিক হোক, সে স্বামী হোক; ত্যাগ করতে পারছে। তারা বাধ্য নয় তাদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় বাস করতে। জিতে যাওয়ার এটি তৃতীয় শর্ত। স্বামীর আচার-ব্যবহার যদি পছন্দ না হয় রোজার, তার স্বনির্ভরতাই তাকে সাহস জোগাবে স্বামীকে ত্যাগ করার, মাথা উঁচু করে একা বাঁচার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের জেতা কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। নারীর জন্যই এ চ্যালেঞ্জ। দুই নারীই তিন শর্তের চ্যালেঞ্জে জিতেছে। চ্যালেঞ্জহীন জয়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জপূর্ণ জয় ঢের বেশি গৌরবময়। জয়তু নারী।’

উল্লেখ্য, বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল সকালে তাহসান বিয়ের খবর জানান। পরে গতকাল সন্ধ্যায় ফেসবুকে রোজার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট দেন তাহসান। পরে ইনস্টগ্রামে নিজেদের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেন রোজা আহমেদও। তাহসানের স্ত্রী রোজা পেশায় মেকওভার আর্টিস্ট। পড়াশোনা করেছেন মার্কিন মুলুকে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে কসমেটোলজির ওপর পড়াশোনা করে সেখানেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান। শহরটির কুইন্সে আছে রোজা’স ব্রাইডাল মেকওভার।