প্রয়োজনে আলামত বিদেশে পাঠানো হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
প্রয়োজনে আলামত বিদেশে পাঠানো হবে

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে, কিছু আলামত দেশের বাইরে পাঠিয়ে পরীক্ষা করতে পারে। গতকাল রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এসব তথ্য জানান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রেস উইংয়ের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উপ প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান আজ (গতকাল) তাদের জানিয়েছেন আগামীকাল (আজ) প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবেন। তদন্তকাজ চলমান। এর অংশ হিসেবে তারা প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে কিছু আলামত দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, কিছু আলামত দেশের বাইরে পাঠিয়েও পরীক্ষা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন।

প্রাথমিক এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের অবহিত করা হবে কি না, জানতে চাইলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপ প্রেস সচিব বলেন, উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন কমিটিপ্রধান। প্রধান উপদেষ্টাই সিদ্ধান্ত নেবেন, এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে।

এই তদন্তকাজ করতে কতটুকু সময় লাগতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তাদের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তারা তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদনটি দেবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা, কমিটি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ মিলে ঠিক করবেন তদন্তটি সম্পন্ন করতে আসলে কত দিন লাগবে। এ বিষয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

জনগণকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান তথ্য উপদেষ্টার: এর আগে দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনাটি আমাদের সবার ভেতরে একটি উদ্বেগ তৈরি করেছে। আমরা ভাবছি পরিকল্পনা হতে পারে, স্যাবোটাজও হতে পারে। সেটা যদি না হয় এবং সচিবালয়ে যদি এ রকম ঘটনা ঘটে, সেটাও আমাদের ভাববার বিষয়। এটার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন। আশা করি, তদন্ত হলে আমরা বলতে পারব। এ সময় তিনি জনগণকে শান্ত থাকার ও ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি কবে নাগাদ চালু হতে পারে এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা সেটা জানতে পারব।

নীতিমালায় পরিবর্তন করে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু: সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে তিন হাজার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের বেশিরভাগই ভুয়া দাবি করে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, নীতিমালায় পরিবর্তন এনে নতুন করে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু হবে। তিনি বলেন, আমাদের যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল, তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার আজকে শেষ দিন। আজকে পর্যন্ত আমরা কাউকে অ্যালাউ করছি না সচিবালয়ে প্রবেশ করার জন্য। সেজন্য আজকে আপনারা প্রবেশ করতে পারছেন না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সামনের দিনগুলোতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের কথা ভাবছি।

সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি: গতকাল সকালে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশে কড়াকড়ি ছিল। জোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অফিস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ে উপদেষ্টা, সচিব এবং দপ্তর বা সংস্থা প্রধান ছাড়া কারও গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দর্শনার্থী অভ্যর্থনা কক্ষে দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করেন। পাঁচ নং গেট দিয়ে মন্ত্রণালয়াধীন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অন্য সব গেট বন্ধ ছিল। দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে সচিবালয়ে সেবা নিতে আসা দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারেননি।

অ্যাক্রিডিটেশন বাতিলের কথা বলা হয়নি: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাক্রিডিটেশন বাতিলের কথা বলা হয়নি বলে গতকাল দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবনের বাইরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন দাবি তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, সেখানেও সে ভাষাটি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিজ্ঞপ্তিতে কোনোভাবেই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের কথা বলা হয়নি।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে সচিবালয় একটি ক্রাইম সিন, এটি প্রটেক্ট করতে হবে। সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ তদন্ত চালাচ্ছে। সচিবালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ (কেপিআই) জায়গায় এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে দেশের একটা বড় বিপর্যয় ঘটেছে। এখানে সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনার জন্য আমরা সহায়তা চেয়েছি। আমরা মনে করি, সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।

আগুনে পুড়ে যাওয়া দপ্তরের কার্যক্রম সচিবালয়ের বাইরে: গত বুধবার ছিল বড়দিনের ছুটি। এদিন গভীর রাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে ৭ নম্বর ভবনে। আগুনে এই ভবনে থাকা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে কম্পিউটার ও আসবাব। দেয়াল ও মেঝেতেও বড় ক্ষতি হয়েছে। ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত তলাগুলো আপাতত ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এ জন্য অস্থায়ীভাবে অধীনস্থ দপ্তরে বিকল্প ব্যবস্থায় দায়িত্ব পালনের চেষ্টা সংশ্লিষ্টদের। গতকাল ধোয়ামোছা অফিস গুছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে অস্থায়ী দপ্তরগুলোর। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গুলিস্তানের জিপিওতে অফিস করবে। শ্রম মন্ত্রণালয় কাকরাইলের শ্রম ভবনে এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে কার্যক্রম শুরু করবে। একইভাবে সেতু বিভাগ মহাখালী সেতু ভবনে যাবে এবং যুব মন্ত্রণালয় জাতীয় ক্রীড়া ভবনে তাদের অফিস পরিচালনা করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।