হামাস-হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যা ইসরায়েলের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৪২
শেয়ার :
হামাস-হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যা ইসরায়েলের

২০২৩ সালে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ ২০২৪ সালেও ছিল আলোচনায়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর বহুদিন ধরে চলা নিপীড়ন ও সামরিক অভিযান জোরাল করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত সেখানে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছেন লক্ষাধিক। তবে িএই বছর যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি ইসরায়েলের বড় লক্ষ্য ছিল ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্ব ‍দুর্বল করা। গত ১৪ মাসে ইসরাইলি হামলায় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও হিজবুল্লাহর অনেক নেতা নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও। 

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনভিত্তিক গোষ্ঠী হুতিও জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে। হামাস-হিজবুল্লাহ-হুতি, ইরান সমর্থিত তিন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যায় ইসরায়েল।  

এক পর্যায়ে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ার, ৩২ বছর ধরে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দেয়া হাসান নাসরুল্লাহকেও হত্যা করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। সবশেষ গত ১৭ নভেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতের রস আল-নাবা এলাকায় হিজবুল্লাহর মিডিয়া শাখার প্রধান মোহাম্মদ আফিফকে হত্যা করে ইসরায়েল। 

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হাতে নিহত হামাস ও হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ নেতারা: 

সালেহ আল-আরৌরি

বছরের প্রথমে হত্যা করা হয় সালেহ আল অরৌরিকে। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সালেহ আল-আরৌরি সংগঠনটির সামরিক শাখার একজন প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার এবং হামাস ও হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রধান যোগাযোগকারী ছিলেন। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন। ৫৭ বছর বয়সী আরৌরি ছিলেন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান এবং গ্রুপটির সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

 মারওয়ান ইসা

গত ১০ মার্চ গাজার নুসেইরারাত শরণার্থীশিবিরের নিচে টানেলে বোমা হামলায় নিহত হন হামাসের ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ইসা। তাকে ইসরাইলে ৭ অক্টোবর হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড মনে করা হয়। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন ইসরাইলের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। ইসা মারওয়ান প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় পাঁচ বছর ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ছিলেন।

তালেব সামি আবদুল্লাহ

গত জুনে ইসরাইলি হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার তালেব আবদুল্লাহ। জুন পর্যন্ত ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে নিহত কমান্ডারদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিলেন হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন।

 মোহাম্মদ দেইফ

ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলার মাস্টারমাইন্ড মনে করা হয় মোহাম্মদ দেইফকে। গত ১৩ জুলাই খান ইউনিসে এক বোমা হামলায় নিহত হন। তবে ১ আগস্ট দেইফের মৃত্যুর কথা জানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

 ইসমাইল হানিয়া

গত ৩১ জুলাই ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়া ইসমাইল হানিয়া ছিলেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান। দায়িত্ব পালন করেছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির সূচনালগ্ন থেকেই এর সদস্য ছিলেন হানিয়া। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর তেহরানে যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন তিনি।

ফুয়াদ শুকর

গত জুলাইয়ের শেষ দিকে লেবাননে বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে। তিনি হিজবুল্লাহর প্রয়াত প্রধান হাসান নসরুল্লাহর সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। হিজবুল্লাহর এ কমান্ডার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অপারেশন সেন্টারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

 ইব্রাহিম আকিল

গত ২০ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইব্রাহিম আকিল নামে হিজবুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হন। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের শহরতলিতে ইসরাইলের এ বিমান হামলা তিনি নিহত হন। ইব্রাহিম আকিল পরিচিত ছিলেন তাহসিন নামে। তিনি হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক দলে ছিলেন। ইব্রাহীম আকিলের মাথার জন্য ৭০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 হাসান নাসরুল্লাহ

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন হাসান নাসরুল্লাহ। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে ইসরাইলের হামলায় নিহত হন তিনি। ওই দিন রাতে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। পরদিন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’ একইদিন হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে হিজবুল্লাহ।

 নাবিল কাওউক

হিজবুল্লাহর প্রয়াত প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পর ২৮ সেপ্টেম্বর নাবিল কাওউক নামে আরেক হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যা করে ইসরাইল। নাবিল কাওউক হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। এছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।

 হাশেম সাফিউদ্দিন

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিতে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য প্রধান হাশেম সাফিউদ্দিনকে লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকে সাফিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করে।

 ইয়াহিয়া সিনওয়ার

হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানে ইসরাইলের অন্যতম বড় সাফল্য মনে করা হয় ইয়াহিয়া সিনওয়ার হত্যাকাণ্ড। গত আগস্টে ইসমাইল হানিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে হামাস তাদের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান হিসেবে সিনওয়ারকে নির্বাচিত করে। গত ১৭ অক্টোবর হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করে ইসরাইল। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় সিনওয়ার নিহত হন।

৬১ বছর বয়সি ইয়াহিয়া সিনওয়ার বেশিরভাগ সময় গাজা উপত্যকার নিচে সুড়ঙ্গের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার মাস্টারমাইন্ড, তথা মূল পরিকল্পনাকারী সিনওয়ার ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

মোহাম্মদ আফিফ

সবশেষ ১৭ নভেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতের মধ্যাঞ্চলে ইসরাইলের হামলায় হিজবুল্লাহর মুখপাত্র মোহাম্মদ আফিফ নিহত হন। বেশ কয়েক বছর ধরে আফিফ হিজবুল্লাহর গণমাধ্যম সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। প্রায়ই নাম না প্রকাশ করে তিনি স্থানীয় ও বিদেশি সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ করতেন। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন প্রথম হিজবুল্লাহর টেলিভিশন চ্যানেল আল-মানারের তথ্য পরিচালক হিসেবে পরিচিতি পান আফিফ।