ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক গোপনীয় ছিল না

অনলাইন ডেস্ক
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:১২
শেয়ার :
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক গোপনীয় ছিল না

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। এ বৈঠকটি ‘গোপন’ ছিল বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানালেন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকটি গোপনে নয়, সরকারের জ্ঞাতসারেই হয়েছে।

আজ শনিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত, ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই আছে, যেসব দেশে দুটো বড় দল আছে -সেখানেও আলোচনার ভিত্তিতে অনেক কিছু নির্ধারিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গত ৫২ বছরে তা দেখিনি। সব সময় সরকার যেটা মনে করেছে তাই করেছে।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অনেক সময় সরকারি দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও বিরোধী দল বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের স্বার্থে বৃহৎ ঐক্য প্রয়োজন। সেখানে আলোচনা হবে, একতরফা কিছুই হবে না।’

দর্শকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আমাদের নলেজেই সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। কোনো গোপনীয়তা ছিল না।’

থাইল্যান্ড-মিয়ানমার ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, মূল আলোচনা তিনটা বিষয় ছিল। তা হলো সীমান্ত, অপরাধ ও মাদক এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ কী হবে। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু ছিল না। আমাকে আমন্ত্রণ জানালে বলেছিলাম এই তিনটা ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে তিনটা জিনিসের সমাধান হবে না।’

সাইড লাইন বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বৈঠকে আমি বলেছি রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান করো। তাদের দুই লাখ তরুণ-তরুণী আছে। তারা যদি আগ্রাসী হয় সেখানে বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশের ক্ষতি হবে। এরই মধ্যে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অনেক মানুষ পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।’ আরাকান আর্মির সময়েও রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে। তা না হলে তোমাদের (মিয়ানমারের প্রতিবেশী সব দেশ) শান্তিও থাকবে না।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি উল্টোটা। দেখেছি রাষ্ট্রের চেয়ে একটা গ্রুপের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে যিনি প্রধান তার স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘাত আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সখ্য আছে। আমাদের এই তিনটি দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, ভারত ও চীনের মধ্যে এত শত্রুতা কিন্তু সেখানে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আমাদের প্রতিটি দেশের সঙ্গে স্বার্থ আছে। কারণ, আমরা যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে মেজর খেলোয়াড় না, তাই আমাদের একধরনের ব্যালেন্স করে চলতে হবে।’