বিআরটি লেনে ঢুকে পড়ছে বাস-ট্রাক, দুর্ভোগে যাত্রীরা
গত ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুরের শিববাড়ি-গুলিস্তান পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটি লেনে বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, আগামী জুনের মধ্যে এই বিআরটি প্রকল্পটি পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হবে। আপাতত বিআরটি লেন দিয়ে ছোট বাহন ও বিআরটিসি বাস চলবে। কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে পাবলিক বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন বিআরটি বাস সার্ভিসের নির্ধারিত লেনে ঢুকে পড়ায় বিআরটির বাসগুলো প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে পড়ছে। এতে অধিক মূল্যে টিকিট কেটেও দুর্ভোগে পড়ছেন তারা।
গত বুধবার সকালে গাজীপুর শহরের শিববাড়ি এলাকা বিআরটি বাস টার্মিনালের কাউন্টারে কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় নতুন এ বাস সার্ভিস নিয়ে। সাব্বির হোসেন নামে এক বাসযাত্রী বলেন, তিনি রাজধানীতে চাকরি করেন। গাজীপুর থেকেই অফিস করেন। যানজট এড়াতে ও সময় সাশ্রয়ের জন্য তিনি এ বাসে চলাচল করছেন। টঙ্গীর উত্তর থেকে গাজীপুর-চৌরাস্তার কয়েকটি স্থানে বিআরটি বাসের লেনের ফাঁকা স্থান দিয়ে মাঝে মধ্যেই বাস-ট্রাকসহ ভারী যানবাহন ঢুকে পড়ে। এতে যানজট সৃষ্টি হয় এবং ওই লেনে বিআরটির বাস আটকা পড়ে। অনেক সময় ওই ফাঁকা স্থন দিয়ে অন্যান্য যানবাহন ইউটার্ন করতে গিয়ে বিআরটি বাসের
পথ আটকে দেয়।
বিআরটি পরিবহনের বাসচালক মো. জামাল উদ্দিন জানান, টঙ্গী কলেজ গেট থেকে বড়বাড়ি পর্যন্ত বিআরটি লেনটি একেবারে খোলা। এ লাইনে গাড়ির চাপ কম আছে মনে করে খোলা স্থান দিয়ে অন্য গাড়ি ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে বিআরটি লেনে পাবলিক গাড়ির সংখ্যা এত বেশি হয়ে যায় যে, অন্য লেন থেকে এই লেনে বেশি হয়। এতে যানজট সৃষ্টি হয় এবং বিআরটি বাসগুলো স্বাভাবিকভাবে আটকা পড়ে যায়। ফলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এসব কারণে বোর্ডবাজার থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। এ ছাড়াও অনেক সময় পুলিশের সামনেই বিআরটি লেনে উল্টোপথে গাড়ি ঢুকে যানজট সৃষ্টি করছে। পুলিশ একটু ভূমিকা রাখলে বিআরটি সার্ভিসের এ সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব হতো। বিআরটি লেনে প্রাইভেট কার, ভিআইপি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেউ নির্দেশনা মানছে না।
রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বিআরটি সার্ভিসের কাউন্টারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, এখানে বিআরটি লেন ক্লিয়ার থাকে না। অন্য বাস এসে তাদের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলেন। তাদের বললেও কথা শোনে না। পুলিশকে বললেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না। নানা কারণে কাক্সিক্ষত যাত্রী না পাওয়ায় এখনও তারা লাভের মুখ দেখেনি। গত মঙ্গলবার পরিসংখ্যান দেখে বলেন, এদিন তাদের আয় হয়েছে সাড়ে ৬৬ হাজার ৬৬০ টাকা, আর শুধু জ্বালানি ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৬২ হাজার টাকা। ড্রাইভার, কর্মচারী-কাউন্টারম্যানের খরচ বাকিই আছে।
গাজীপুরের শিববাড়ি কাউন্টারম্যান মো. ইব্রাহিম শিকদার জানান, এখান থেকে সকাল পৌনে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ৩০ মিনিট পরপর এবং সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৪৫ মিনিট পরপর গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। শিববাড়ি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চারটি এবং গুলিস্তান পর্যন্ত ৫টি কাউন্টারে যাত্রী ওঠানামা করে। প্রতি কাউন্টার দু-এক মিনিট করে যাত্রা বিরতি দেয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এডিসি অশোক কুমার পাল জানান, বিআরটি প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ শেষ না করেই বিআরটি বাস সার্ভিস চালু করায় কিছু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে জনবল কম থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে চালকদেরও সচেতন হওয়া উচিত।