বসতভিটা রক্ষা না হলে আত্মহুতির হুমকি মধুমতি মডেল টাউনের প্লট মালিকদের
নিজেদেরকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে বতসভিটা রক্ষার আবেদন জানিয়েছে রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থিত মধুমতি মডেল টাউনের বাসিন্দারা। নিজেদের বসতভিটা রক্ষা করতে না পারলে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মহুতিরও হুমকি দিয়েছেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মধুমতি মডেল টাউন হাউজিং সোসাইটির নেতারা।
লিখিত বক্তেব্যে প্লট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘২০০১ সালে রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে মেট্রোমেকার্স নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান মধুমতি মডেল টাউন নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। আমরা প্রকল্পের অবস্থান, নথিপত্র যাচাই করে নাল জমি হিসেবে সেখানে প্লট ক্রয় করি। জমির সিএস, আরএস, এসএ খতিয়ানে দেখা গেছে যে, জমির প্রকৃতি হলো-নাল, জলাশয় নয়। এমনই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষেরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে মধুমতিতে জমি ক্রয় করি। ’
তিনি বলেন, ‘যথারীতি সরকারের সাব-রেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এসিল্যান্ড জমি খারিজ করেন ও ভূমি অফিস ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করেন। ডেভেলপার কোম্পানি রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ নির্মাণ করেন ও বৈদ্যুতিক পোল বসান। পল্লী বিদ্যুৎ- বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ এ আবাসন থেকে প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল আদায় করে। এই অবস্থায় হঠাৎ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)- এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকল্পটিকে বন্যা প্রবাহ এলাকা উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। ’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সুজাউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘আদালত প্রথমে আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে মধুমতি মডেল টাউনের মালিক মেট্রোমেকার্সকে রাজউকের অনুমোদন নিতে বলে। বেলা আপিল করে প্রভাব খাটিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে বেলার পক্ষে একটি রায় করান। সেই রায়েও প্লট মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প এলাকায় মালিক কর্তৃপক্ষ মেট্রোমেকার্স যদি ৬ মাসের মধ্যে মাটি সরিয়ে না নেয় তাহলে রাজউক উক্ত মাটি সরিয়ে নিবে। মেট্রোমেকারস থেকে মাটি সরানোর ব্যয় আদায় করতে বলেছে এবং সেখানে কোনো ধরনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। ’
তিনি বলেন, ‘একই রায়ে প্লট মালিকদের রেজিস্ট্রেশন ব্যয়সহ জমাকৃত অর্থের দ্বিগুন টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। অথচ একযুগ অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি ক্ষতিপুরণের একটি টাকাও পরিশোধ না করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপদেষ্টা হয়ে তার প্রভাব বিস্তার করে রাজউককে দিয়ে আমাদেরকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা মনে করি এই রায়ের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হয়েছে। ’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘মধুমতি মডেল টাউনের পূর্বপাশে ৫০০ বিঘা জমিতে বিদ্যুতের পাওয়ার প্লান্ট, পশ্চিমে বেসকারি মালিকানাধীন যমুনা ন্যাচারাল পার্ক (প্রায় ৫০ একর), প্রকল্পের সুম্মুখভাগে এক হাজার একর জমিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় রয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প তৈরির জন্য একটি চাইনিজ প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া মেট্রোরেলের ডিপো অবস্থিত। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি স্থাপনা রয়েছে একই এলাকায়। এ বিষয়ে বেলা বা অন্য কারও কোনো অভিযোগ নেই। শুধু মধুমতি মডেল টাউনের দিকে তাদের যতো আক্রোশ ও প্রতিহিংসা। অথচ এই প্রকল্পের অনুমোদন এর জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ৯টি ছাড়পত্রের মধ্যে ৮টি ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। ’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
সুজাউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘২০ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। প্রকল্পে ১০ লাখের বেশি গাছ রয়েছে। একটি গাছ কাটলে বেলা আন্দোলন করে অথচ এই প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১০ লাখের বেশি গাছ কাটা যাবে। এটা কি পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। আমরা এর প্রতিকার চাই। উল্লেখ্য যে ইতোমধ্যে মেট্রো মেকারস রায়ের মডিফিকেশন চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে ১১ ডিসেম্বর এ একটি আবেদন করেছে। মাননীয় চেম্বার জজ রেজাউল হক আগামী ২৩ জানুয়ারি ফুল কোর্টে শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আমাদের আবেদন কয়েক লাখ মানুষের ভিটেমাটি তাদের ভাগ্য মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে না নিয়ে মধুমতি মডেল টাউনে আমাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ আন্যায়ভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে আমরা বাসিন্দারা শিশু, নারী, পুরুষ আত্মাহুতি দিতে পিছপা হব না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্লট মালিক সমিতিরি সভাপতি সৈয়দ মোশাররফ হোসেন, সহসভাপতি মো. আব্দুস সাত্তার, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল আলমখানসহ অনেকে।