রোহিঙ্গা আলেমদের সমাবেশ থেকে স্বদেশে ফেরার আকুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬
শেয়ার :
রোহিঙ্গা আলেমদের সমাবেশ থেকে স্বদেশে ফেরার আকুতি

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১ নম্বর ইস্ট ক্যাম্পের মাঠে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গা আলেমদের সংগঠন ‘ইসলামি মাহাসা’। সমাবেশে প্রায় লাখো রোহিঙ্গা যোগ দেন। এ সময় রোহিঙ্গা নেতারা নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানান।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন ভোর থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন রোহিঙ্গারা।    

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নিমর্ম নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এবং ক্যাম্পের শরণার্থী জীবনকে বন্দি খাঁচার পাখির জীবনের মতো মনে হয়। এ জীবন আমরা চাই না। এই জীবন খুবই কষ্টের। এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে, নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

এ সময় রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা দাবি করেন। নিজ দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে যেতে নানা ধরনের স্লোগান দেন।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে ফিরে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে। রোহিঙ্গাদের দাবিসমূহ মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে আমরা ফিরে যাব।’

ডা. জোবায়ের আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ফিরতে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে। আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও হত্যা করে যাচ্ছে। এর আগে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার সঠিক ও ন্যায় বিচার এখনও হয়নি। রোহিঙ্গা নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো নিশ্চিত করা হলে আমরা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার চলে যাব। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সারাজীবন থাকার জন্য আসেনি। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিয়েছে, থাকার জন্য জমি দিয়েছে, ঘর দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করেছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। আমরা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের কাছে সারাজীবন ঋণী হয়ে থাকব।’

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মাওলানা রাহমত করিম বলেন, ‘ক্যাম্পের এমন জরাজীর্ণ বন্দি জীবন মানুষের জন্য না। এখানে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে, তার জন্য রোহিঙ্গারা কৃতজ্ঞ। এখন সারা বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরতে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

সমাবেশে মাওলানা জহির আহমেদ, কাওয়ালি হামিদ, মাওলানা আব্দুর রশিদ, মাওলানা দিল মোহাম্মদসহ অসংখ্য রোহিঙ্গা আলেম ওলামা এবং যুবকেরা বক্তব্য রাখেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সিরাজ আমিন রোহিঙ্গাদের সমাবেশের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে এ সমাবেশ করেছেন।’

কক্সবাজারের শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে। এই সমাবেশটি গত পরশু (সোমবার) আয়োজনের জন্য অনুমতি গ্রহণ করেছে। বুধবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশটি শেষ হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। সে সময় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে ছিল। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে এবং নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসান চরে এসব রোহিঙ্গা বসবাস করছে। সাম্প্রতিক সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর যুদ্ধে আরও ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গা।