অস্থিরতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাক খাত

আব্দুল্লাহ কাফি
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
অস্থিরতা কাটিয়ে ঘুরে 
দাঁড়াচ্ছে পোশাক খাত

নানা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। দীর্ঘ সময় এ খাতে অস্থিরতা বিরাজ করলেও এখন স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে। কারখানাগুলোতে পুরোদমে কর্মযজ্ঞ চলছে। ক্রেতাদের মধ্যেও আস্থা ফিরে আসছে। নতুন নতুন অর্ডার আসছে। গেল পাঁচ মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানিও বাড়ছে। এদিকে সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট এ খাতের উদ্যোক্তাদের অনেক প্রত্যাশা। সরকার ভালোভাবে উদ্যোগ নিলে বিশ^বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে বলে আশা তাদের। তবে স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু সংকট এখনও রয়ে গেছে। এগুলো জরুরিভিত্তিতে সমাধান চান তারা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা শুরু হয়। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানাগুলোতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর পুরো পোশাক খাতে অস্থিরতা নেমে আসে। অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর পদক্ষেপে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি। তিনি বিশ^ নেতাদেরকে অনুরোধ করলে কেউ ফেলে দেবেন না। আগামী বছর বাংলাদেশের পোশাক খাতের অবস্থা আরও ভালো হবে বলে আশা করছেন তারা।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে রপ্তানি বৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে। গত পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানির ৮১ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এ সময়ে ১ হাজার ৬১২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে গত মাসেই ১৭৪ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়, প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে গত ১০ মাসে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৫৭ কোটি ডলারের, প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপেও আগের তুলনায় রপ্তানি বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরÑ এ ১০ মাসে ইউরোপে বাংলাদেশের

প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময়ে ১ হাজার ৬৫২ কোটি ২৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা-পরবর্তী ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল। কিন্তু এক বছর না যেতেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে পুরো ইউরোপ উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে। এতে মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দেয়। বর্তমানে ইউরোপে মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এ কারণে পোশাকের বিক্রি বাড়ছে।

পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরে এসেছে। নতুন নতুন অর্ডার আসছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারপ্রধানের নিকট ব্যবসায়ীদের অনেক প্রত্যাশা। তাকে সারাবিশ^ চেনে। বিশ^ নেতারা তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তিনি বিশ^ নেতাদের অনুরোধ করলে তারা নতুন নতুন চুক্তিতে আগ্রহী হবে। এতে সহজে বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। তবে অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, এনবিআরের পলিসিগত সমস্যার সমাধান জরুরি।

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, আগের তুলনায় পরিবেশ অনেকটাই ভালো। তবে ক্রেতারা এখনও পর্যবেক্ষণ করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে। এ কারণে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে। তবে আমরা আশাবাদী, অন্তর্বর্তী সরকার ক্রেতাদের আস্থা ফেরাতে পারবে।

এদিকে হঠাৎ করে গত ১৫ ডিসেম্বর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। এতে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়বে। নতুন করে এই অস্থিরতা পোশাক খাতে নতুন সংকট তৈরি করবে বলেও আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।