গালি দেওয়ার অপরাধে শ্বাসরোধ করে হত্যা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৭
শেয়ার :
গালি দেওয়ার অপরাধে শ্বাসরোধ করে হত্যা

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে চাঞ্চল্যকর সালমা (৩৩) হত্যার রহস্য উদঘাটন ও প্রধান আসামী আরিফ সেখ (৩৬) কে গ্রেপ্তার করেছে। আরিফ বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আলাউদ্দিন সেখের ছেলে।

গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মো. সৈয়দ আলী মন্ডলের বড় মেয়ে সালমা আক্তার (৩৩)। গত ২০০৭ সালে একই গ্রামের আকামুদ্দিন সরদার সঙ্গে তার মেয়েকে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পারিবারিকভাবে বিবাহ দেন। ওই সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। গত ২০২১ সালে পারিবারিক কলহের জের ধরে আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকেই বাবার বসতবাড়ীর পাশে ছেলে সন্তানসহ আলাদাভাবে বসবাস করেন।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার সময় সালমা ঘাস ও কলাপাতা নেওয়ার জন্য বাবার বাড়ীতে আসেন এবং কিছুক্ষণ ওই বাড়ীতে থাকার পর মাগরিবের নামাজের সময় পুনরায় বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় সালমা আক্তারকে খোঁজার জন্য নানা বাড়ীতে আসে তার ছেলে। তখন নাতিসহ মেয়ে সালমাকে খুঁজতে থাকেন। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার সময় সালমার বসতবাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় তার পরনের সেন্ডেল পড়ে থাকতে দেখে তার ছেলে। সে নানাকে বলে "এইতো আমার মায়ের সেন্ডেল"। তখন নানা তার নাতিকে নিয়ে হলুদ ক্ষেতসহ লেবু বাগানে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে দেখেন মৃতদেহ গোবিন্দপুর গ্রামের বসতবাড়ীর উত্তর-পশ্চিম কোণে সায়েন্স উদ্দিন শেখের লেবু বাগানে একটি লেবু গাছের ডালার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ফাঁস লেগে পড়ে আছে। তখন চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে পুলিশকে সংবাদ দেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সালমার মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুতপূর্বক ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় মো. সৈয়দ আলী মন্ডল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে বালিয়াকান্দি থানায় গত ২ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন।’

মামলার ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভিনের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় বালিয়াকান্দি থানাসহ জেলা গোয়েন্দা শাখা নিবিড় তদন্ত শুরু করে। তদন্ত চলমান থাকার এক পর্যায়ে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরিফ সেখকে গতকাল শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে ঢাকা জেলার সাভার থানার গেন্ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ সালমা হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সালমার আচার-আচরণ ছিল উগ্র। তার বাড়ির সীমানায় থাকা রাস্তায় কেউ চলাচল করলে তাকে বকাবকি করতেন। টিউবওয়েলের পানি নিতে আসলেও খারাপ ব্যবহার করতেন। এ কারণে আরিফের পরিবারে সবসময়ই অশান্তি লেগে থাকতো। এজন্য তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। ওই দিন সালমার বাড়ির সীমানা দিয়ে হেঁটে আসার সময় সালমা আরিফকে গালি দেন। পাল্টাপাল্টি গালিগালাজের এক পর্যায়ে আরিফ বলপ্রয়োগ করে সালমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে অজ্ঞান করেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার পরনের ওড়না দিয়ে লেবু গাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে দেন।

গ্রেপ্তারকৃত আরিফকে শুক্রবার রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করা হয়। আরিফ আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।