অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে উত্তরা ইপিজেড

আবু আলী, নীলফামারী থেকে ফিরে
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে উত্তরা ইপিজেড

দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলাধীন সংগলশী ইউনিয়নে অবস্থিত এই ইপিজেডটি আঞ্চলিক অর্থনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। শুধু মৌসুমভিত্তিক কাজের সুযোগ থাকায় এ অঞ্চলে আগে স্থানীয়দের বেকারত্ব ছিল বেশি। বর্তমানে ৩৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই ইপিজেডে, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশই স্থানীয় বাসিন্দা। এর মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে উত্তরা ইপিজেড।

জানা গেছে, ২০০১ সালে স্থাপিত উত্তরা ইপিজেডে বর্তমানে ২৩টি শিল্প ইউনিট রয়েছে। বেপজার তথ্য অনুযায়ী, আরও কয়েকটি কারখানা উৎপাদন শুরু করতে প্রস্তুত। বর্তমানে ২৬০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে ইপিজেডটি। তবে ব্যাপক চাহিদার কারণে এর আকার বেড়ে প্রায় ৩০০ একর হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি চীন, হংকং ও যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করেছেন। ইপিজেডটি শিল্পায়নের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া উত্তরাঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য তৈরি করেছে। এর ফলে পরোক্ষভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট ব্যবসা, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করেছে।

উত্তরা ইপিজেডে কর্মসংস্থানে শীর্ষে রয়েছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে এবং বর্তমানে আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এ কারখানায় উৎপাদিত পণ্য শতভাগ রপ্তানিমুখী। ইউরোপের বড় দুটি দেশের মধ্যে আমেরিকার কোম্পানি জি-থ্রি, কসকো ও ডিকনি (যুক্তরাষ্ট্র) এবং স্পেনের ম্যাঙ্গো এখানকার প্রধান ক্রেতা। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের প্রাইমার্কের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস বছরে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার পিস ডেনিম, চিনো, কার্গো প্যান্ট ও আউটওয়্যার উৎপাদনে সক্ষম। তবে বর্তমানে বছরে ৬০ লাখ পিস পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। সর্বমোট আয়তন ২ লাখ ৭১ হাজার ২৭২ বর্গফুট। প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে পরিচিত, যেখানে এমব্রয়ডারি, ডেনিম গার্মেন্টস, ওয়াশিং ইউনিট ও প্রিন্টিং সুবিধা রয়েছে।

দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের জেনারেল ম্যানেজার (প্রডাকশন) ইসুরু উমেশ জানান, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা। চায়না-বাংলা যৌথ ব্যবস্থাপনায় কারখানার উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস চালুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো শিপমেন্ট বাতিল হয়নি। ইপিজেড ও কাস্টম নীতিমালা মেনে সঠিক প্রক্রিয়ায় শিপমেন্টের মাধ্যমে রপ্তানি করা হচ্ছে উৎপাদিত পণ্য। রপ্তানি কাজকে আরও সহজ করতে ইপিজেডের পাশে একটি রেল স্টেশন স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

দেশবন্ধু টেক্সটাইলের হেড অব এইচআর, অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স মো. আশরাফ উল্লাহ জানান, দক্ষ কর্মীর অভাব উত্তরবঙ্গের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় শত শত কারখানা থাকায় চাহিদামতো কর্মী পাওয়া যায়, কিন্তু এখানে সে সুযোগ নেই। ফলে বাছাই করা কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ চালানো হচ্ছে। এই ইপিজেডে দেশবন্ধু টেক্সটাইলসহ মাত্র তিনটি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। আরও কয়েকটি কারখানা চালু হলে গার্মেন্টস হাব হবে উত্তরা ইপিজেড। সমগ্র উত্তরা ইপিজেডের কাজ ত্বরান্বিত করতে ও রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করতে উত্তরবঙ্গের অবকাঠামো আরও সংস্কার ও উন্নয়ন দরকার বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।