শিক্ষা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম কমিশন হওয়া উচিত

জাবি প্রতিনিধি
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:১৭
শেয়ার :
শিক্ষা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম কমিশন হওয়া উচিত

শিক্ষা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম কমিশন হওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক অধিকার লঙ্ঘন: প্রতিকারে নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রচুর কমিশন করেছে। কিন্তু সহজ শিক্ষা সংস্কারের গবেষণা নিয়ে কোনো কথা বলছে না। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম কমিশন হওয়া উচিত শিক্ষা সংস্কার কমিশন। শিক্ষা কমিশন গঠন এখন সবচেয়ে জরুরি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় কমিশন হয়েছে। সেসব কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, সেসব খুবই দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাব। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আসলে ক্যাপাবিলিটি নেই। যেখানে জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত, সেখানে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে ৪ শতাংশ আছে, বাংলাদেশে এতদিন ছিল ২.১ শতাংশ, এখন তা মাত্র ১.৬০ শতাংশ। শুধু নৈতিকতার কারণে একজন ভাল শিক্ষক হবেন এমনটা সম্ভব নয়। প্রাইমারি স্কুলে মাত্র ১৭ হাজার টাকায় ভাল শিক্ষক পাওয়া সম্ভব নয়।

ইংরেজি ভাষা শিক্ষার পরিধি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের লোকেরা ইংরেজি জানে না- এটা নিশ্চিত। ইংরেজি ভাষাভাষী লোকের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২তম। অথচ ভদ্রলোকের ছেলে-মেয়ে ইংরেজি মিডিয়াম ছাড়া পড়ে না। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আরবান টপার মিডলক্লাসের ছেলেমেয়েরা পড়ে না। এতগুলো লোক যদি ইংরেজিতে পড়ে তাহলে ইংরেজি ভাষাভাষী কম কেন?’ 

অধ্যাপক আজম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘৫ বছরে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব। গতবারের যে কারিকুলামের সেটা আইডিয়ালি ভাল, তবে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। পাঠ্যপুস্তকের ভূমিকায় তারা বিশ্বব্যাংকের কথা লিখেছে, সরাসরি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর কথা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে নির্লজ্জের মত লিখে দিয়েছে।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত পরিবর্তনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভার্সিটিতে শুধুমাত্র একটা পরিবর্তন চাই। স্টুডেন্ট না হলে কেউ হলে থাকতে পারবে না। ৫৩ বছরে প্রথমবারের মত এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আরেকটা নিয়ম হবে নভেম্বর মাসে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইলেকশন দিতে হবে। সেকেন্ড মাস্টার্স বা এমফিল কেউ ভোট দিতে পারবেন না। নির্দিষ্ট সময় পর এটার ফল হবে অসাধারণ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পিএইভডি কোলাবরেশন সম্ভব। বাংলাদেশে ব্যাসিকালি কোনো পিএইচডি নেই।’

তিনি আরও বলেন,‘পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ফুলটাইম, ফুল ফান্ডেড পিএইচডি চালু করতে হবে। ২/৩ টা ভার্সিটিতে এ সুযোগ চালু করতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আলিয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে একটা মেইনস্ট্রিম বলতে হবে। যুক্তিমুখী, একমুখী শিক্ষা বলে যা প্রচার করা হচ্ছে তা একটা অপরায়নের ফলাফল। বিদেশে যারা কাজ করতে যায়, তাদের কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে একীভূত করতে পারলে এর ফলাফল অসাধারণ হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাবিলিটি অল্প খরচে বানাতে হবে।’

কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়ার সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক মুশতাক খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণের (নাবিক) সভাপতি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসিমসহ আরও অনেকে।