মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে যেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিল র্যাব
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। দিবসটি সুষ্ঠুভাবে পালনের লক্ষ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি এবং নিরাপত্তা টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে। পাশাপাশি সম্ভাব্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাহিনীটি বলছে, উৎসবের দিনে কেউ কোনো ধরনের অপরাধ করলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
রবিবার রাতে বাহিনীর মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে সোমবার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবন, দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জনসমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে দিবসটি পালন করতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে র্যাবও বিজয় দিবস উপলক্ষে এর নিরাপত্তা জোরদার করেছে।’
তিনি জানান, বিজয় দিবসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ১৩ ডিসেম্বর থেকে দায়িত্বপূর্ণ এলাকার উল্লেখযোগ্য ভেন্যুসমূহ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি এবং নিরাপত্তা টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে ব্যাটালিয়নসমূহের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি আরও জানান, ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা সমূহের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহের আশেপাশে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্ম টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইন নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। র্যাবের টহল জোরদার করার পাশাপাশি দেশব্যাপী বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডগ স্কোয়াড ও র্যাব বোম্ব স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাবের স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনসহ সারাদেশে মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে র্যাবের দৃশ্যমান উপস্থিতি ও টহল অব্যাহত রাখতে হবে। অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে কেউ যেন কোন প্রকার ব্যাগ, বস্তা বা কার্টুন জাতীয় কোন দ্রব্য বহন ও সংরক্ষণ না করতে পারে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি অথবা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিকরণ এবং এরা যাতে সংঘাতে লিপ্ত হয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। এসকল ভেন্যু/অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি আরও যোগ করেন, ‘সারাদেশে ভিভিআইপি/ভিআইপি, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের গমনাগমনের স্থানসহ জনসমাগম হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে এমন স্থানে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। শহরের প্রবেশ/বাহির পথসমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনপূর্বক তল্লাশি পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেখানে জনসমাগম বেশি হয় সেসব এলাকাসমূহে যাতে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
এছাড়া সন্ত্রাসী/অপরাধীরা যাতে বস্তি/হোটেল/রেস্ট হাউজে অবস্থান করে অপরাধ পরিকল্পনা করতে না পারে এই লক্ষ্যে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সকল বস্তি, হোটেল, গেস্ট/রেস্ট হাউজ, নগরীর উপকণ্ঠে নতুনভাবে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকাসমূহ ও ক্রাইম জোনসমূহে নজরদারি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ‘র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড টিমকে কৌশলগত স্থানে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তার কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক, বোমাবাজিসহ সহিংস ঘটনা রোধকল্পে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও নিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগত কোন নারী যাতে ইভটিজিং, যৌনহয়রানী অথবা সম্মানহানীর স্বীকার না হন সেদিকে বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
র্যাবের কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি জানান, ব্যাটলিয়নসমূহ নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে। র্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের (কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নাম্বার: ০১৭৭৭৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে। মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। এছাড়াও উক্ত সময়ে যে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতা পেতে নিকটস্থ র্যাব অফিসে যোগাযোগ করার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।