গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিলো ১৫৮ দেশ
গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি এবং জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার (১১ ডিসেম্বর) অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ভোটে ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৮টি ভোট পড়ে দাবির পক্ষে। অনুপস্থিত ছিল ১৩ সদস্য দেশ, আর বিপক্ষে পড়েছে ৯ ভোট।
স্লোভেনিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল জবোগার সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, ‘গাজার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা ধ্বংস হয়ে গেছে। বেসামরিক মানুষ ক্ষুধা, হতাশা এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে।’
যুদ্ধবিরতির জন্য জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখন যুদ্ধবিরতি দরকার। আমাদের এখন জিম্মিদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে।’
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘে আলজেরিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত নাসিম গাওয়াউই বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডির মুখে নীরবতা ও ব্যর্থতার মূল্য অত্যন্ত ভারী। এটি আগামীতে আরও ভারী হবে।’
এদিকে ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রস্তাবে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মানার আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রমে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর বলেন, ‘গাজার শিশুদের দুর্দশা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সারা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দেওয়া উচিত।’
তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের মতে, এই প্রস্তাব হামাসের প্রতি ভুল বার্তা দিচ্ছে এবং তাদের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা থাকলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ গাজার মানবিক সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গাজার সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪৪,৮০৫ জন নিহত এবং ১,০৬,২৫৭ জন আহত হয়েছে। এই যুদ্ধ মূলত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের জীবনকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাতদিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির আওতায় হামাস শতাধিক ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তিও দেয়। তবে এখনো তাদের হাতে শতাধিক ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে।