চাকরি ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে নারীপাচারের অভিযোগে ২ চীনা নাগরিক গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:২৯
শেয়ার :
চাকরি ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে নারীপাচারের অভিযোগে ২ চীনা নাগরিক গ্রেপ্তার

চাকরি ও বিয়ের প্রলোভলে ফেলে নারীপাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেএয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। গতকাল সোমবার পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন চীনা নাগরিক ফ্যান গোউয়ে (২৭) ও ইয়াং জিকু (২৫)।

চাঁদপুরের  সুবর্ণা আক্তার (২১) নামের এক ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নজরে আসে।  গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাচারকালে তিনি পালিয়ে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে চলে আসেন। তিনি জানান, ফ্যান গোউয়ে নামের একজন চীনা নাগরিক তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছেন, যিনি বর্তমানে চীনে যাওয়ার উদ্দেশে এয়ারপোর্টে অবস্থান করছে।

অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিতা রানী সূত্রধর তার সহযোগী ফোর্সসহ বোর্ডিং লাউঞ্জ-৫ এ অভিযুক্ত চীনা নাগরিককে অভিযোগকারীর সহায়তায় শনাক্ত এবং আটক করেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন থেকে অফলোড করণপূর্বক অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত দুজনকেই এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসা হয়। অভিযুক্তের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ও ভুক্তভোগীর প্রদানকৃত তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নিকুঞ্জের একটি তিনতলা বাড়িতে আরও দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগী অবস্থান করছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সোমবার দিবাগত গভীর রাতে সিআইডির টিএইচবি সেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়ান্দা সংস্থা (এনএসআই) ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন-এর একটি দল নিকুঞ্জের সেই বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে তারা ইয়াং জিকু নামের আরেকজন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, গত অনুমান দুই বছর আগে টিপু ও জিহাদ নামে দুজনের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় ভুক্তভোগীর। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কথা হতো। কথাবার্তার একপর্যায়ে জিহাদ তাকে চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি হলে টিপু ও জিহাদ গত ২৬ অক্টোবর ভুক্তভোগীর নিজ বাড়ি থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

টিপু ও জিহাদ ভিক্টিমকে ঢাকায় খিলক্ষেত থানা এলাকার নিকুঞ্জ-১, রোড-৯/বি এর ৮ নম্বর বাড়িতে নূরু নামক এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে আসে।এরপর নূরু নামের ওই ব্যক্তি ইয়াং হও নামের চীনা নাগরিকের সঙ্গ ভুক্তভোগীর বিয়ের নাটক সাজান। ভুয়া বিবাহের পর তারা উল্লেখিত নিকুঞ্জের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন তারা।

ওই বাড়িতে আরো ৭-৮ জন চীনা ব্যাক্তি ও আরও নারীকে দেখেছেন বলে ভুক্তভোগী জানান। এর মধ্যে পাচারকারীচক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীর পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে ও ভুক্তভোগীকে নিকুঞ্জের বাসায় আটকে রাখে। ভুক্তভোগীকে এই সময়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। গত সপ্তাহে ভূক্তভোগীর কথিত স্বামী ইয়াং হও চীনে চলে যায়। পরবর্তীতে পাচারকারীচক্রের সদস্য ফ্যান গুয়াই এমইউ-২০৩৬ ফ্লাইটে পাচার করার জন্য গতকাল ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক বাসা থেকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসেন। বিমানবন্দরে এনে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সেটিংসের ভাষা চাইনিজ ভাষায় রুপান্তর করে ফেরত দেয়।

বিমানবন্দরে সুযোগ বুঝে পালিয়ে ভুক্তভোগী নারী এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে সাহায্য চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তড়িৎ ব্যবস্থা নেন। আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার, অতিরিক্ত ডিআইজি শিহাব কায়সার খান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন – ‘বেশ কিছু দেশের মানবপাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রভোলন দেখিয়ে পাচার করার চেষ্টা করে। তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি।’

মানবপাচার পুরোপুরি ঠেকাতে সবার সতর্ক থাকার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।