আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসতে হবে ভারতকে
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। ২০২০ সালে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে অধিকারভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করে দলটি। নিবন্ধন পায় ২০২৪ সালে। বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ, নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক সভা-সেমিনার এবং দেশের সব ইস্যুতে সরব দলটির শীর্ষ নেতারা। সাম্প্রতিক ইস্যুসহ নানা বিষয় নিয়ে আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা বলেন এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মুহম্মদ আকবর।
শুরুতেই কথা হয় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা বরাবরই আশাবাদী। স্বাধীনতার পর থেকে নানা ষড়যন্ত্র ও দুঃশাসনের যাঁতাকলে পড়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়লেও মুক্তিকামী মানুষ তা মেনে নেয়নি। যুগে যুগে বিপ্লবীদের জন্ম হয়েছে। তাদের আত্মদান ও সংগ্রামে দেশ বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, এবারও কাক্সিক্ষত সংস্কারের পথ ধরে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারবে এবং ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা ফেরার পথ চিরতরে রুদ্ধ হবে।
আত্মঘাতী পথে ভারত না বাংলাদেশ? জবাবে এবি পার্টির সদস্য সচিব বলেন, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো পরিবর্তন নেই। বরং এই সময়ে এসে তাদের নির্লজ্জ রূপ ধরা পড়েছে। তাদের উচিত ছিল বাস্তবতা মেনে নিয়ে পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনা, ভুলগুলো সংশোধন করা। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা
ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভারত শুধু শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের স্বার্থরক্ষা করছে। এতে বাংলাদেশের মানুষের মনে ভারত সরকারের একচোখা নীতির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ক্ষোভ ও অবিশ্বাস বিরাজ করছে। যার পুরো দায় ভারতীয় ভুল কূটনীতির। এই আত্মঘাতী পথ থেকে তাদের সরে আসতে হবে, বুঝতে হবে বাংলাদেশের জনগণ এখন অনেক ঐক্যবদ্ধ ও আত্মপ্রত্যয়ী। ভারত সরকার হুমকি বন্ধ না করলে রাষ্ট্র হিসেবে তাদের নিজেদের সার্বভৌমত্বও নিরাপদ থাকবে না।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া দরকার? মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া উচিত মর্যাদাপূর্ণ ও পরস্পরের প্রতি সমশ্রদ্ধাসম্পন্ন। দাদাগিরি সুলভ মানসিকতা ভারতের পরিহার করা উচিত।
কূটনীতিক পলিসির মূল্যায়ন করতে গিয়ে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের কূটনীতির মূল পলিসি- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। কিন্তু আমার সঙ্গে যে বৈরী আচরণ করবে, তার সঙ্গে বন্ধুত্বে কোনো মর্যাদাপূর্ণ নীতি থাকতে পারে না। নিকট অতীতে ভারতীয় মদদপুষ্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার তাদের সব অন্যায্য ও পীড়নমূলক আচরণ মাথানত করে মেনে নিয়েছে। একতরফা গোলামি চুক্তি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ন্যায্য পানির হিস্যা বা বাণিজ্যবান্ধব কোনো স্বার্থই আদায় করতে পারেনি। দিনের পর দিন সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যায় তারা ন্যূনতম প্রতিবাদও করেনি। এমন দাসত্বসুলভ নীতি দেশবাসী মেনে নেয়নি। আবার অন্তর্বর্তী সরকার যখন ভারতের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জবাবে চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করেছে, তখন জনগণের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ হবে আগামী বছর। তাহলে নির্বাচন কবে হবে? কেমন হবে আগামী নির্বাচন? দলের এই সদস্য সচিব বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাসহ নির্বাচনের জন্য কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিশ্চিতে ১ বছর সময় লাগতে পারে। আমাদের ধারণা, নির্বাচন কমিশন আগে স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনগুলো করে ফেলতে চাইবে। সে হিসেবে এক থেকে দেড় বছরের আগে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা কম। নির্বাচন কমিশন যদি সব গুছিয়ে ভোটের আয়োজন করতে পারে, তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বেশ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ মাস পার হয়েছে। এই সময়ে কাজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, মূল্যায়ন দুই ধরনের দৃষ্টিকোণ থেকে করতে হবে। প্রথমত, বিধ্বস্ত একটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ, ষড়যন্ত্র ও পরিস্থিতির হিসেবে বলতে হবেÑ এই সরকার গত ৪ মাসে যত জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, তা এ যাবত কোনো সরকারকে করতে হয়নি। এটা তাদের একটা বড় কৃতিত্ব। দ্বিতীয়ত, এই সরকার বিশেষ করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি মানুষের যে বিশাল আস্থা ও আকাক্সক্ষা, সে বিবেচনায় অর্জন আশানুরূপ নয়। দীর্ঘসময় ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। পুলিশ ও মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের দোদুল্যমানতায় তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিকসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারের কাজে আরও গতিশীলতা দরকার।
অনেক সময় নতুন রাজনৈতিক দলগুলো বড় দলের উদ্দেশ্য সাধনে বা তাদের ছায়ায় থাকে। এমন বাস্তবতায় এবি পার্টির বিষয়ে মঞ্জু বলেন, আমাদের দলের ক্ষেত্রে কেউ এ ধরনের কথা বলবে না। আমরা কারও ছায়ায় নেই, উদ্দেশ্য সাধনেও ব্যাপৃত নই। শুরু থেকে অনেক জল্পনা ও অপপ্রচার ছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দলের কার্যক্রম এবং কর্মসূচি দেখে মানুষ বুঝতে পেরেছে এবি পার্টি সত্যিকার অর্থে একটি অর্গানিক দল। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শুরু থেকে সাহসী ভূমিকার জন্য আমরা সাধুবাদ ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি। জনগণের এই ভালোবাসা ও আস্থা দেখে অভিভূত। দলের নেতাদের গঠনমূলক কথা, দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আমরা ধীরে ধীরে এগোচ্ছি এবং সমৃদ্ধ ও সংগঠিত হচ্ছি। ভবিষ্যতে এবি পার্টি আশা জাগানিয়া দলে রূপান্তরিত হবে।
ভোটের মাঠে জোটের রাজনীতিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না- জানতে চাইলে এই সদস্য সচিব বলেন, আপাতত নেই। তবে সামনে কৌশলগত কারণে কোনো জোট করতে হলে সেটি বিবেচনায় থাকবে।