কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান
‘বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে ইভেন্টটির আয়োজন করে ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস) বাংলাদেশ, সুইডেন দূতাবাস এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর (DoWA)।
এই অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, শিল্পপ্রধান, সিভিল সোসাইটি সংগঠন, যুব সমাজ এবং অনুপ্রেরণাদায়ক পরিবর্তনশীলরা একত্রিত হন। এতে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রের লিঙ্গবৈষম্যের বাধাগুলো তুলে ধরা এবং লিঙ্গ সমতার টেকসই সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণে বাধাগুলো চিহ্নিত করা এবং STEM, নির্মাণ শিল্প, আর্থিক খাত, আইন, কর্পোরেট নেতৃত্ব, মিডিয়া এবং খেলাধুলাসহ বিভিন্ন খাতের চ্যালেঞ্জগুলি দূর করার উপায় নিয়ে কার্যকর আলোচনা এগিয়ে নেওয়া।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি মূল বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘নারী ক্ষমতায়ন শুধু বৈষম্য দূর করার জন্য নয়; এটি বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনাগুলো উন্মোচন করার ব্যাপার। আমাদের প্রতিটি সেক্টরে নারীদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনের পথে বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতি নিতে হবে।’
ইউএনওপিএস বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরণ কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার যৌথ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘নারীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা কেবল নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ইউএনও পিএস -এ, আমরা এমন একটি কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে প্রতিটি নারী তার সম্ভাবনা অর্জনে সক্ষম!’
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস লিঙ্গ সমতার প্রতি সুইডেনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘সুইডেন লিঙ্গ সমতাকে তার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করে এবং বাংলাদেশের সাথে প্রতিটি অংশীদারিত্বে এই নীতিটি অনুসরণ করে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
STEM খাতে নারীদের সাফল্য নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা এবং সম্প্রদায়ের প্রবক্তাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ইভেন্টের বিশেষ আকর্ষণ ছিল অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে ইন্টারঅ্যাকটিভ ডায়ালগ সেশন। এ সময় প্যানেলিস্টরা, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিয়া জুনেদ, অভিনেত্রী ও পরিচালক ত্রপা মজুমদার, বাংলাদেশ
ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন, দেশ গ্রুপ অব কোম্পানিজের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিদ্যা অমৃত খান, ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড, পার্টনারশিপ এবং কমিউনিকেশন প্রধান শামীমা আক্তার এবং স্থপতি ও শিক্ষক অপি করিম, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা এগিয়ে নেওয়ার বাধা ও সুযোগগুলো নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
‘শাইনিং ব্রাইট: অনুপ্রেরণামূলক তরুণীদের গল্প’ শীর্ষক সেশনে সেরিব্রাল পালসি (শারীরিক প্রতিবন্ধী) নিয়ে সংগ্রাম করা আফিয়া কবির অনিলা এবং আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়া (ARCASIA)-তে স্বর্ণপদক বিজয়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী তাওরেম সানানু তাদের জীবনের গল্প তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
মূল লক্ষ্যসমূহ:
• সচেতনতা বৃদ্ধি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির জন্য লিঙ্গ তুলে সমতার গুরুত্ব ধরা।
• আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি: কর্মক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করতে অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো।
• সফল উদ্যোগ তুলে ধরা: লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার গ্লোবাল এবং স্থানীয় উদ্যোগ প্ৰদৰ্শন।
• সমাধান নির্ধারণ: পদ্ধতিগত বাধা দূর করার জন্য কার্যকর সুপারিশ তৈরি।
কর্মে অনুপ্রাণিত করা: নীতিমালা ও প্রোগ্রামের মাধ্যমে নারীদের কর্মক্ষেত্রের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা।
• অনুষ্ঠানের সমাপনি বক্তব্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান বলেন, ‘লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই যাত্রায় পুরুষদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে গেলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। একসঙ্গে কাজ করলেই আমরা নারীদের নেতৃত্ব ও সাফল্যের জন্য পথ তৈরি করতে পারব।’
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, ইউএনওপিএস বাংলাদেশ এবং সুইডেন দূতাবাস বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনের লক্ষ্যে তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। ইভেন্টটি নারীর ক্ষমতায়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভবিষ্যৎ উদ্যোগগুলোর জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করেছে।