ট্রান্সকমের শেয়ার হস্তান্তরে ব্যবহার করা স্ট্যাম্প ভুয়া
দুটি ভুয়া নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে ট্রান্সকম গ্রুপ লিমিটেডের অধিকাংশ শেয়ার হস্তান্তরের দলিল তৈরি করে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) দাখিল করা হয়েছিল।
ডাক বিভাগ ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিসের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট শরীফুর রহমানের আদালতে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন হয়।
এদিন ওই দুইটি নন-জুডিশিয়ল স্ট্যাম্পে ট্রান্সকম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ্ হকের স্বাক্ষর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক সাজেদুর রহমান আবেদেন করে। শুনানি শেষে ফরেনসিক পরীক্ষার আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
শাযরেহ্ হকের আইনজীবী আমিনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আরজেএসসি থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যে নথি জব্দ করেছেন, সেখানে দেখা যায় লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবী নজরুল ইসলামের মাধ্যমে সিমিন রহমানের নামে অধিকাংশ শেয়ার ট্রান্সফার সংক্রান্ত নথি আরজেএসসিতে দাখিল করেন।
স্ট্যাম্প দু’টির সত্যতা নিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন চান আদালত। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, যে ভেন্ডর থেকে এই স্ট্যাম্প দু’টি সরবরাহের তথ্য আছে, সেই ভেন্ডরের লাইসেন্স ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাতিল করা হয়। আর ২০২০ সালে করোনা মহামারি থাকায় ওই ভেন্ডর কোনো স্ট্যাম্প উত্তোলন বা রেজিস্ট্রার জমা করেননি। তবে স্ট্যাম্প দু’টি কবে নাগাদ অবমুক্ত করা হয়েছিল সেটি জানার জন্য ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয় বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সহকারী নিয়ন্ত্রকের (স্ট্যাম্প) কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন নিতে আদালতকে পরামর্শ দেয়। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২ ডিসেম্বর ডাক বিভাগের সহকারী নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) শুভ্র সুত্রধর এর আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয় স্ট্যাম্প দু’টি ২০২৩ সালের মে মাসে দ্যা সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের কাছ থেকে সহকারী নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) কর্তৃক গ্রহণ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
শাযরেহ্ হকের আইনজীবী আরও বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান ওই দু’টি স্ট্যাম্পে শাযরেহ্ হকের যে স্ক্যান করা স্বাক্ষর ব্যবহার হয়েছে সেটির ফরেনসিক পরীক্ষার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত বলেছেন, যেহেতু স্ট্যাম্প দু’টি ভুয়া তাই আর ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এ কারণে আজ আবেদনটি নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
শাযরেহ্ হক বলেছেন, ‘আমার পিতা মৃত লতিফুর রহমান তার জীবদ্দশায় ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩ হাজার ৬০০টি শেয়ারের মালিক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ১ জুলাই মারা যান। আমিসহ অন্যান্য উত্তরাধিকারী আমার পিতার ওই শেয়ারের মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী মালিক। আমার পিতা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা অবস্থায় কুমিল্লায় মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাবার প্রায় এক বছর আগে থেকেই তিনি কুমিল্লাতে অবস্থান করছিলেন। আমার পিতার ২৩ হাজার ৬০০ শেয়ার থেকে এক নম্বর আসামি (সিমিন রহমান) আমাকে এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বঞ্চিত করার জন্য অবৈধভাবে নিজের নামে বেশি শেয়ার ট্রান্সফার করে হস্তগত করার হীন অসৎ উদ্দেশ্যে এক নম্বর আসামি ২ থেকে ৫ নম্বর আসামিদের (ট্রান্সকম কর্মকর্তা) প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার ট্রান্সফারের বিভিন্ন কাগজপত্র আমার এবং আমার ভাইয়ের অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে তৈরি করেন। আমার পিতার মৃত্যুর পর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা কাগজপত্র ৩ নম্বর আসামি (কামরুল হাসান) রেজিস্ট্রার অব জয়েন স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে জমা দেন। এক নম্বর আসামি (সিমিন রহমান) থেকে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ৪ ও ৫ নম্বর আসামি (মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক) জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা কাগজে সাক্ষী হিসেবে সই করেন।’