অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না আইনজীবী সাইফুলের

অনলাইন ডেস্ক
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:১৫
শেয়ার :
অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না আইনজীবী সাইফুলের

চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের (৩৫) তাসকিয়া নামের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায় ছিলেন আলিফ এবং তারিন দম্পতি।

চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধাদানকারী ইসকন সর্মথকদের হামলায় নিহত হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। তাই অনাগত সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না তার।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কোতোয়ালীর রঙ্গম সিনেমা হলের পাশের মেথর পট্টি থেকে আহত অবস্থায় ওই আইনজীবীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. হাসান নামে এক আইনজীবী বলেন, ‘পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে বিক্ষোভকারীরা কোপায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’

নিহত সাইফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হয়েছিলেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চতুর্থ।

এ আইনজীবীর বড় বোন জান্নাত আরা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আলিফের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। সে অকালে তার বাবাকে হারিয়েছে। অনাগত সন্তানও তার বাবার মুখ দেখবে না। আবার ভাইয়েরও তার দ্বিতীয় সন্তানকে দেখার সৌভাগ্য হলো না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিহত সাইফুল ইসলামের পরিবারের সদস্য, স্বজন এবং চট্টগ্রাম আদালতের সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তারা বলেন, ‘অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পেশাগত জীবনে খুবই সৎ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

সন্তানকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন তার বৃদ্ধ বাবা জামাল উদ্দিন। বিলাপ করতে করতে জামাল উদ্দিন বলেন, 'আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। যারা আমার ছেলেকে এমনভাবে মেরেছে। আমি আল্লাহর কাছে তাদের বিচার দিলাম। আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন।' 

আলিফের ভাগিনা তাসলিমুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মামা খুবই ভালো ছিলেন। যখন আমার সঙ্গে দেখা হতো পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব খোঁজ-খবর নিতেন। আমার মামাকে যারা হত্যা করেছে, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।’

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে তার লোকজন তিন-চার ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রেখেছিল। পরে তাদের সরিয়ে দিয়ে তাকে যখন কারাগারে নেওয়া হলো, তারা আদালত ভবনে ওঠার পথে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আমাদের একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবীর ওপর আক্রমণ করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ওই আইনজীবী একটু অসুস্থ ছিলেন। তিনি হেঁটে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে থেকে মুসলিম হাইস্কুলের দিকে পার হচ্ছিলেন। তখন তাকে টেনেহিঁচড়ে রঙ্গম হলের সামনে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এটা একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’

উল্লেখ, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাশ করে তিনি আইন পেশায় নিযুক্ত হন।