নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং

অনলাইন ডেস্ক
২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০২
শেয়ার :
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার প্রেস উইং। এই নিয়ে সরকারের অন্যরা যা বলছেন তা তাদের ব্যক্তিগত মতামত বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। 

গতকাল রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এখন মানুষের জানার আগ্রহ, কবে নির্বাচন হতে পারে। এর মধ্যে একজন উপদেষ্টা লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে, যা গণমাধ্যমে এসেছে। আসলে নির্বাচন কবে হতে পারে?

এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা বা তার দপ্তর থেকে নির্বাচনের কোনো তারিখ দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের তারিখ তিনিই ঘোষণা দেবেন এবং তার পক্ষ থেকেই দেওয়া হবে। বাকি যারা বলেছেন, তা নিজেদের মতামত।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার আরেক উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘প্রত্যেকে তার মতামত দিতে পারেন। কিন্তু সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সম্পূর্ণ আইন মেনে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, ‘গুম কমিশন সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বা জমা দেয়নি। কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টাসহ আরও কয়েকজন উপদেষ্টা মিলে গুম কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তারা একটি অন্তবর্তী প্রতিবেদন দেবেন। তার ভিত্তিতে সরকার যদি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন মনে করে, তাহলে ব্যবস্থা নেবে।’

ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান চায় জানিয়ে উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমরা আশা করছি।’

এ বিষয়ে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু এখন আদালতে আছে, আইনি প্রক্রিয়াতেই সরকার এর সমাধান চায়।’

ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরসহ সাংবাদিকদের হয়রানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। নিউ এজ সম্পাদকের ঘটনার বিষয়ে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, অন্য কোনো বিষয়েও যদি সরকারের নজরে আনা হয়, তাহলে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নজরে আনা না হলেও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনে কাজ করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত তালিকা সংশোধন করার জন্য ‘ম্যানুয়ালি’ (হাতে-কলমে) কাজ করা হচ্ছে। তারা আশা করছেন, এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।’

এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করার বিষয়টি বিবেচনায় আছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘এখানে ভিন্নমতের ব্যক্তি বা সাংবাদিকদের নাম থাকবে না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বলে ওনাকে বিদেশে গমনে বিরত রাখতে হবে বা আদালতের আদেশ থাকে। এই পুরো বিষয়গুলো যাতে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে থাকে। তিনি বলেন, একটি স্বচ্ছ নীতিমালা, যেটা আপনিও জানতে পারবেন, বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকও এই বিষয়টি জানতে পারবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, ‘জনপ্রশাসনে বদলি-পদোন্নতি স্বাভাবিক বিষয়। যেহেতু দেশে একটা পটপরিবর্তন হয়েছে, এ কারণে জনপ্রশাসনের রদবদল জনদাবি। সরকারও মনে করেছে, কাজে গতিশীলতা আনার জন্য প্রশাসনে কিছু অবশ্যম্ভাবী রদবদল করতে হবে। সরকার সেই অনুযায়ী কাজ করছে। শূন্যপদে উপযুক্ত কাউকে মনে করা হলে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসনে গতিশীলতা আনার জন্য নিয়মিত করে যাবে।’

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ মজুমদার বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যু কমে আসবে সেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের অপপ্রচারের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কোনও গুজব ছড়ালে তা প্রতিরোধে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রেস উইং থেকে আলাদা পেজ খুলে মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একইসঙ্গে গুজব প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। আজাদ মজুমদার বলেন, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যদি সহযোগিতা পাওয়া যায়—তাহলে গুজব ছড়িয়ে বা অহেতুক আতঙ্ক ছড়িয়ে সমাজে কোনও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

যানজট বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, ‘এটি নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তা এখনও চলমান আছে। এর বাইরেও কিছু কারণ আছে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও কারণে, কোনও না কোনও গ্রুপ সড়কে অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট ঢাকা শহরের পুরনো সমস্যা। সড়কে অবস্থানের কারণে যানজট আরও বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করছে সবার দাবি-দাওয়া শোনার। কারও দাবি যৌক্তিক হলে সমাধানের চেষ্টা করবে। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই—যানজট হওয়ার মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবেন, সরকারের নির্দিষ্ট চ্যানেলে দাবি জানালে যানজটের বাড়তি ভোগান্তি থাকবে না।’

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে দেশে বলপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দেশের কোনো নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যকে বরখাস্ত করেনি। এই নিয়ে বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল- এটি নিয়ে ভুল সংবাদ প্রচার করছে।

প্রেস উইং আরও জানায়, গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এমন কোনো সুপারিশ কমিটি থেকে করা হয়নি।

কমিশন প্রধান বলেন, ‘আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ২২ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে-তথ্যটি মিথ্যা। এটি একটি ভুয়া খবর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, টিভি চ্যানেলগুলো তথ্যটি সংশোধন করে সংবাদ প্রচার করবে।’