‘ছেলে কীভাবে মারা গেছে, ভয়ে বলতে পারতাম না’

ঢাবি প্রতিবেদক
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৪৪
শেয়ার :
‘ছেলে কীভাবে মারা গেছে, ভয়ে বলতে পারতাম না’

‘বুয়েট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। আমি কখনোই ভাবি নাই, রেহানের কথা দ্বিতীয়বার উচ্চারণ হবে। ২০১৩ সালের ৫ মে রাত ১০টায় টিভির সামনে বসে আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো নিপীড়ন দেখছিলাম। মনের মধ্যে অশান্তি লাগছিল। ছেলেকে ফোন দিচ্ছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম- কখন আমার ছেলেটা আসবে এবং সারাদিনে যা ঘটেছে তা বলবে। হঠাৎ করে ফোন আসলো। বললো- রেহানের মাথায় গুলি লাগছে। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পেলাম না। দেড়টায় বাসায় ফিরে আসলাম। সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল সকালে বের হয়ে খুঁজবো। ফজরের আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করে বের হয়ে যাই। নিজেকে সকাল পর্যন্ত আটকে রাখতে পারি নাই। খুঁজতে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেল মর্গে পেলাম আমার ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি ছেলেটা। শরীর বেয়ে রক্ত ঝরে যাচ্ছে। এভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে তা চিন্তাও করি নাই।’

আজ শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই ডিপার্টমেন্টের আইএসি সেমিনারে রুমে 'রেহান আহসান স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল' শীর্ষক অনুষ্ঠানে এভাবেই ছেলে হারানোর কথা বলছিলেন রেহানের মা ইফাত আরা বেগম। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে নিহত হয়েছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী রেহান আহসান।

ছেলে মৃত্যুর স্মৃতিচারণ করতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইফাত আরা বেগম। তিনি বলেন, 'আমার ছেলে যে মারা গেছে এই কথাটা কাউকে বলতে পারতাম না। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম-একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে। বলা বারণ ছিল। ছেলের লাশটা বেশিক্ষণ রাখতেও দেয়নি। থানা থেকে পুলিশ এসে বলে দাফন করেন। ওকে রাতেই দাফন করা হয়। তারপর সবকিছু শেষ।'

তিনি বলেন, 'রেহান আমার বড় সন্তান ছিল। অনেক আদরের, অনেক আশার ধন, ওর বাবার কলিজার টুকরো, আমার তো বটেই। রেহানের বাবা তাকে অনেক ভালোবাসতো। রেহানকে হারানোর কষ্টটা তিনি নিতে পারে নাই। তার কথায় ছিল শূন্যতা। এক বছর তিন মাস পর রেহানের বাবাও পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। একসাথে দুটো যন্ত্রণা বহন করতে হয়েছে। যেখানে ছেলের শোকই শেষ হয় নাই, সেখানে স্বামী হারানোর কষ্ট শুরু হয়। তীব্র সংগ্রাম করে এই পর্যন্ত টিকে আছি।'

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রেহানের মা বলেন, 'বাবারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যেও। আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই। যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন রেহান দেখেছে। তোমরা দেখেছো। পরবর্তী প্রজন্ম যেন একটা জঞ্জাল মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে পারে। আর যেন কোনো মাকে সন্তান হারাতে না হয়।'

এসময় রেহানের বোন ফারিয়া স্মরণি, তার বন্ধু তানভীর, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক আলামিন সিদ্দিক ও সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস আলী বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য শেষে 'দোয়া মাহফিল' অনুষ্ঠিত হয়।