১৭ হাজার কোটি টাকার রেলসেতুর উদ্বোধন জানুয়ারিতে
উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। যমুনা নদীর বুকে নির্মিত এ মেগা প্রকল্প চালু হবে আগামী জানুয়ারিতে। এর মধ্যে দিয়ে দেশের উত্তর ও পূর্ব বঙ্গের মানুষের জীবনযাত্রা আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে, বাড়বে ব্যবসা বাণিজ্যও।
৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের যমুনা রেলসেতুর পুরোটাই এখন দৃশ্যমান। মোট ৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যানসহ অন্যান্য সকল কাজই ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখন চলছে নদীর দুপাড়ে সংযোগ রেলপথ ও অত্যাধুনিক প্ল্যাটফর্মের নির্মাণ কাজ।
যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন চলছে যমুনা রেলসেতুর শেষ মুহূর্তের কাজ। এটি হবে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের রেলসেতু। ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা বিশেষভাবে তৈরি মরিচারোধী বড়বড় স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেতুটির স্প্যানগুলো। আর সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সাধারণ ট্রেনের পাশাপাশি দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে যমুনা রেলসেতু। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনেরে এক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। ক্রসিংয়ে পড়বে না রেলগুলো। এতে সময় সাশ্রয় হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া এই প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে এর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলসেতুর দুপাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ সাইডিংসহ রেললাইন নির্মাণ হয়েছে। প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ি জানান, রেলসেতুটি চালু হলে সিরাজগঞ্জের ব্যবসার চিত্র পাল্টে যাবে। একই সঙ্গে উত্তরের জেলাগুলোর উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
অপর দিকে যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক, আলফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে সকল কাজ শেষ করে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে ডুয়েল গেজ ডাবলট্রাকের এই রেলসেতুর ওপর দিয়ে ১০০ থেকে ১২০ কি. মি. বেগে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তি স্থাপন করে। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।