মালিকানা জটিলতায় আটকা গ্রাহকের ৩৪ কোটি টাকা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের নানা উদ্যোগের পরও মালিকানা জটিলতায় পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের ৩৪ কোটি টাকা ফেরত প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানটির দুই উদ্যোক্তা সোনিয়া মেহজাবিন ও বিথী আক্তারের মধ্যকার মালিকানা বিষয়ক জটিলতায় আটকে গেছে প্ল্যাটফর্মটি পুনরায় চালুকরণ প্রক্রিয়াও। যোগ্য প্রতিনিধির অভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও গ্রাহকদের অর্থ ফেরতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় গ্রাহকের টাকা ফেরত এবং পুনরায় ব্যবসা চালুর বিষয়ে আইনগত সমাধান জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি এবং একটি অডিট ফার্মকে দিয়ে নিরীক্ষা করলে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত পরিস্থিতি জানা যাবে। আর
পাওনা টাকা আটকে থাকা গ্রাহকদের দাবি, শুধু পেমেন্ট গেটওয়ের টাকা ফেরতই নয়, এর বাইরেও তাদের অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোর সমাধান করতে হবে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ই-কমার্স খাতের জটিলতায় গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। কমিটি সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছে এবং সমাধানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত ২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের কারিগরি কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে ৩৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠান ৬৭ হাজার অর্ডারের বিপরীতে প্রায় ৪১১ কোটি টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে। তবে গ্রাহকদের কোনো টাকা ফেরত দেয়নি ই-অরেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯১ টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
প্রায় ৩ বছর পর প্রথমবারের মতো ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের পক্ষে আইনজীবী শামসুল হুদা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের সভায় যোগ দেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা সোনিয়া মেহজাবিন ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে নোটারি
পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তিনামা করে জনৈকা বিথী আক্তারের কাছে ই-অরেঞ্জের মালিকানা হস্তান্তর করেন। চুক্তিনামা অনুযায়ী সে বছরের ১ এপ্রিল থেকে ই-অরেঞ্জের সব দায়িত্ব বিথী আক্তারের। বিথী আক্তার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সে মালিকানা পরিবর্তন করে তার নামে করে নিয়েছেন এবং তার স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকাও তুলেছেন। কিন্তু বিথী আক্তার বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা দাবি করছেন না। অন্যদিকে সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান কারাগারে আটক রয়েছেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ই-অরেঞ্জ মালিকানা সংক্রান্ত বিষয় আইনগতভাবে নিষ্পত্তি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।
পরে ই-অরেঞ্জের মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়টি আইনগতভাবে নিষ্পত্তির বিষয়ে সোনিয়া মেহজাবিনের পক্ষে সম্প্রতি তার আইনজীবী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আরও একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবিন ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে আর মালিক নন। আর বীথি আক্তার মালিক হওয়ার পরও, এখন মালিকানা দাবি করছেন না এবং গ্রাহকদের জন্য কাজ করছেন না। এ অবস্থায় বিভিন্ন মামলার চার্জশিট থেকে সোনিয়া মেহজাবিন এবং তার স্বামীর নাম বাদ দিয়ে তাদের জামিনে মুক্তি দিলে এবং মালিকানা ফেরতের ব্যবস্থা নিলে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়া সহজতর হবে এবং ব্যবসা পুনরায় চালু করার সম্ভাবনা থাকবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের সভায় সার্ভার নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অথচ সার্ভারে গ্রাহকের সব তথ্য রয়েছে। কোন গ্রাহক কত টাকা দিয়েছেন, কবে দিয়েছেন, কোনো পণ্য অর্ডার করেছেন, ডেলিভারি পেয়েছেন- নাকি পাননি, কত টাকা পাবেন- এ জাতীয় সব তথ্য রয়েছে। এসব তথ্য সঠিক অবস্থায় পাওয়া না গেলে গ্রাহকের অর্থ ফেরত নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা হবে। এ কারণে সার্ভার অতি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে মালিকানা জটিলতার অবসান হলে গ্রাহকদের পেমেন্ট গেটওয়ের টাকা দেওয়া যাবে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাঈদ আলী। তিনি বলেন, পেমেন্ট গেটওয়েতে ই-অরেঞ্জের যে টাকা আটকে আছে, সেটি ছাড় করতে মালিকানা জটিলতার অবসান হতে হবে।