১১ লাখ গ্রাহকের বীমা দাবি নিষ্পত্তি অনিশ্চয়তায়

আবু আলী
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
১১ লাখ গ্রাহকের বীমা দাবি নিষ্পত্তি অনিশ্চয়তায়

দেশে জীবনবীমা পলিসি নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে মানুষের আস্থাহীনতা। এর বাইরে দাবি নিষ্পত্তিতে কোম্পানিগুলোর প্রক্রিয়াগত জটিলতা, গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদে আর্থিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে অনীহা ও প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাব এবং বীমা কোম্পানির এজেন্ট বা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সন্তোষজনক সেবা না পাওয়াও বীমা খাতের বিকাশে বাধা হয়ে আছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুসারে, ৩৬টি জীবনবীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩১টির প্রায় ১১ লাখ বীমাকারীর তিন হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে গ্রাহকরা কবে তাদের টাকা ফেরত পাবেন তা অনিশ্চিত।

জানা গেছে, দেশে বীমার আওতায় রয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ। আগে এ সংখ্যা আরও বেশি থাকলেও স্বচ্ছতার অভাবে বীমা গ্রহীতার সংখ্যা কমে আসছে। একই সঙ্গে নানা কারণে এ খাতে আস্থাহীনতা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও খাত বিশেষজ্ঞরা এই সংকটের জন্য অপরিকল্পিত ও মন্দ বিনিয়োগ, এজেন্টদের উচ্চহারে কমিশন দেওয়া ও অত্যধিক ব্যবস্থাপনা খরচকে দায়ী করেছেন।

আইডিআরএর তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জীবনবীমাকারীদের দাবি নিষ্পত্তির হার কমেছে। ২০২০ সালে যেখানে দাবি নিষ্পত্তির হার ছিল ৮৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে। নিষ্পত্তিযোগ্য দাবি থাকা ৩১টি বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিষ্পত্তির হার সবচেয়ে কম ৯টির। এর মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এককভাবে দুই হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা বীমা দাবি থাকলেও পরিশোধ করেছে মাত্র ৩২ কোটি টাকা।

২০২১ সালের এপ্রিলে সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানিকে দিয়ে আইডিআরএর পরিচালিত নিরীক্ষায় ফারইস্টের দুই হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ ছাড়াও ৪৩২ কোটি টাকার হিসাবে অনিয়ম পাওয়া গেছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, এই টাকা মূলত দুইভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রথমত, বাজারদরের তুলনায় বেশি টাকায় জমি কেনা। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠানটির মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট (এমটিডিআর) বন্ধক রেখে নেওয়া ব্যাংক ঋণ। এমটিডিআর হচ্ছে এমন ব্যবস্থা, যেখানে মুদারাবা অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখা টাকার ওপর মুনাফা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, অধিকাংশ জীবনবীমা প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই খারাপ। পদ্মা ইসলামী লাইফ ২২৬ কোটি টাকা দাবির বিপরীতে মাত্র চার কোটি, প্রগ্রেসিভ লাইফ ১৭৪ কোটি টাকার মধ্যে ছয় কোটি, সানফ্লাওয়ার ১৪১ কোটি টাকার মধ্যে দুই কোটি, বায়রা লাইফ ৬৭ কোটি টাকার মধ্যে দুই কোটি, সানলাইফ ৬৪ কোটি টাকার তিন কোটি ও প্রাইম ইসলামী লাইফ ৮৬ কোটির

মধ্যে ৫০ কোটি টাকা দাবি নিষ্পত্তি করেছে। এই পাঁচ বছরে গোল্ডেন লাইফ ৩৭ কোটি টাকা দাবির বিপরীতে এক কোটি টাকা ও হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স ২৫ কোটি টাকা দাবির বিপরীতে চার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

আলফা ইসলামী লাইফ, এলআইসি বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ তাদের সব বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে বলে আইডিআরএর তথ্য জানা গেছে।

চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও এস এম জিয়াউল হক আমাদের সময়কে বলেন, কিছু বীমা কোম্পানির কারণে পুরো সেক্টরের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। যারা বীমা দাবি পরিশোধ করছে না, তাদের জন্য আমরা যারা নিয়মিত বীমা দাবি পরিশোধ করছি, তাদেরও দায় নিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, এখানে কোনো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নেই। এতে মানুষ বীমা থেতে দূরে সরে যাচ্ছে। দু-চারটি ছাড়া বেশিরভাগই সাইনবোর্ড সম্বলিত কোম্পানি। এখানে মানুষের টাকা মেরে দেওয়া হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।