নিরাপত্তা ভরসা আস্থার প্রতীক সশস্ত্র বাহিনী
আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বড় অংশীদার। সেই অর্থে বিশ^ শান্তির প্রতীক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে মাঠে নেমে সশস্ত্র বাহিনী জননিরাপত্তায় ভরসা ও আস্থা তৈরি করেছে। পাশাপাশি পুলিশের লুট হওয়া এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ডাকাত গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন টিম। পার্বত্য অঞ্চলে সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করছে। দিনে-রাতে টহল ও চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সারাদেশে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতার কারণেই কেটে গেছে অস্থিতিশীলতা; ফিরেছে স্বস্তি- এমনটাই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী যে মাঠে কাজ করছে, এটা তাদের মূল কাজ না। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারের (বেসামরিক ক্ষমতাকে সামরিক সহায়তা) আওতায় বেসামরিক প্রশাসনকে তারা সহায়তা করছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল। ফলে মানুষের মধ্যে অস্থিতিশীলতা কেটে স্বস্তি ফিরেছে। তিনি আরও বলেন, সারা পৃথিবীতে আমাদের সেনাবাহিনী শান্তি স্থাপন করছে। এখন পৃথিবীর মানুষ যদি দেখে যে, যারা সারা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করছে, তাদের দেশেই শান্তি নেই। তাহলে সেটা তো আমাদের জন্য ইতিবাচক কোনো বার্তা বয়ে আনবে না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেও সেনাবাহিনীর একটা দায়িত্ব আছে। দেশের মানুষের জন্য সেই দায়িত্ব তারা পালন করছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে গত ১৩ নভেম্বর সেনসদর এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, সেনাবাহিনী দেশের সাত শতাধিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। লুট হয়ে যাওয়া ৬ হাজার অস্ত্র ও দুই লক্ষাধিক গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধে সম্পৃক্ত আড়াই হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
ব্রিফিংয়ে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, পরিস্থিতি আরও উন্নতির জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পরের যে পরিসংখ্যান, তাতে দেখা গেছে, আগের তুলনায় অপরাধের নথিভুক্ত রেকর্ডের সংখ্যা কমেছে। তার মানে পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। সেনাবাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সবাইকে সম্পৃক্ত করে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী জাতির ক্রান্তিকালে মানুষের ভরসাস্থল হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে জননিরাপত্তার পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং জাতি গঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা ২১ নভেম্বর সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য ও দেশপ্রেমিক জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে অংশ নেন। হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (আজ) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হবে। দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও বিমান ঘাঁটির মসজিদে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি, সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে।
রাষ্ট্রপতির বাণী
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ববোধ, ধৈর্য ও দেশপ্রেম সাধারণ মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে। কেবল দেশেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে পেশাগত দক্ষতা, সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
প্রধান উপদেষ্টার বাণী
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী দুর্গত জনগণের শেষ ভরসার স্থান। বরাবরের ন্যায় এবারও দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা, শিল্প কারখানায় নিরাপত্তা প্রদানসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অস্ত্র উদ্ধারসহ সকল কার্যক্রমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আইএসপিআর জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন। এ সময় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শুভেচ্ছা স্মারক বিতরণ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।