‘বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার’ যুবকের তথ্যে অভিযান, উদ্ধার ৩১
কক্সবাজারের টেকনাফে ‘বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার’ যুবকের তথ্যে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ি এলাকার গোপন আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জনকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় আটক র্যাবের কাছে আটক হয়েছে দালাল চক্রের দুই সদস্যও।
গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) দেবজিত পাল।
আটকরা হলেন, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পানখালী এলাকার মৃত অছিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ার (৪৪) এবং টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী এলাকার মৃত মোহাম্মদ রফিকের ছেলে মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৬)। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ২৬ জন রোহিঙ্গা ও ৫ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও শিশু ২৩ জন।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিরা হলেন, মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের কায়কোবাদ এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (২৭) ও নজির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ শহিদ (১৭), একই ইউনিয়নের সাদেকেরকাটা এলাকার মো. ফরিদের ছেলে এলাকার মো. গিয়াস উদ্দিন (২২), চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মকশেট আজম এলাকার আবুল কালামের ছেলে আতিকুর রহমান (২২) এবং টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার মো. সাব্বিরের ছেলে হাসনা বেগম (১৮)।
ভুক্তভোগীর বরাতে এএসপি দেবজিত পাল বলেন, গত মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলার মোছাখোলা এলাকার এখলাছ মিয়া ও তার এক চাচাত ভাইসহ ২/৩ জন বন্ধু মিলে টেকনাফে বেড়াতে যান। এক পর্যায়ে তারা বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে যান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মেরিন ড্রাইভে ছবি তোলার সময় ৬/৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে তাদের জিন্মি করে চোঁখ বেধে ফেলে। এমতাবস্থায় তাদের স্থানীয় একটি পাহাড়ের চূঁড়ায় নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘সেখানে ছোট একটি খুপড়ি ঘরে আগে থেকে ৪০/৪৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু অবস্থান করতে দেখতে পায় জিন্মি হওয়া যুবকরা।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ভূক্তভোগী এখলাছ মিয়া জানান, মানব পাচারকারিরা তাকে মারধর করে নির্যাতন চালিয়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একপর্যায়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেও মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় মানব পাচারকারিরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরে তাকেসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য পাহাড় চূড়ার খুপড়ি ঘর থেকে সাগর পাড়ের ট্রলারের কাছে নিয়ে যায়। এসময় সে কৌশলে পালিয়ে গিয়ে বিষয়টি র্যাবকে অবহিত করে।
তিনি বলেন, এ তথ্যের ভিত্তিতে গত রবিবার মধ্যরাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার পাহাড়ে র্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এতে সন্দেহজনক ৫/৬ জন লোক দৌঁড়ে পালানোর সময় দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জড়ো করা ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়াদের বরাতে এএসপি দেবজিত পাল জানান, সাগরপথে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে মানবপাচারের দালালরা তাদের কচ্ছপিয়া এলাকার পাহাড়ে চূড়ায় জিন্মি করে রাখে। পরে স্বজনদের কাছ থেকে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ আদায় করে। যারা মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের মালয়েশিয়া পাচারের নামে অন্য কোথাও জিন্মি রাখতে ট্রলার যোগে নিয়ে যাচ্ছিল।
আটক দালালদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।