শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

চট্টগ্রাম ব্যুরো
১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২৫
শেয়ার :
শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়াউর রহমান জিয়াকে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এমন অভিযোগ তোলেন তারা। এ সময় জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন স্বজন, এলাকাবাসী ও ছাত্র জনতা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে জিয়াউর রহমান জিয়াকে আটক করা হয়। পরে তার কাছ থেকে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন কোস্ট গার্ড। জিয়া মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

তবে সমাবেশে পরিবার ও স্বজনদের দাবি, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তারেক বিন উসমান শরীফের ইন্ধনেই জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।

মানববন্ধনে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর ফুপু খায়রুন্নেছা রুবি বলেন, ‘জিয়াকে গ্রেপ্তারের পেছনে ইন্ধন দিয়েছে শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি উসমান শরীফ। তার সে সময়ের রাজনৈতিক সহযোগী, বন্ধু ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের অনেকে বর্তমানে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত। এই মাফিয়া বর্তমানে জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের নিধনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নেমেছে। অবিলম্বে ওসমান শরীফকে গ্রেপ্তার করে আমাদের ছেলে জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

তানভীর সিদ্দিকীর চাচা কামরুল হাসান রুবেল বলেন, ৫ ও ৬ আগষ্ট বা তারও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে মহেশখালী থানায় হামলা কিংবা পুলিশের অস্ত্র লুটের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কক্সবাজার মডেল থানা, ঈদগাও থানা এবং চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানায় উত্তেজিত জনতা হামলার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের সেই উত্তাল সময়ে জিয়া মহেশখালী অবস্থান করছিলেন। তবুও তার কাছে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের তথাকথিত দাবি কীভাবে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে?

শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর দাদা মো. শফি বলেন, গত মাসে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। যা সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়া। তার তত্ত্বাবধানে হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। তখন সেখানে প্রশাসনের লোকজন; বিশেষ করে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য, পুলিশ ও এবং স্থানীয় সচেতন নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন। তখন কারো মনে হলো না, জিয়া একজন সন্ত্রাসী। কিছুদিন পর হঠাৎ তাকে গ্রেপ্তার করে কেন অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হলো? একজন শহীদ পরিবারের সাথে এমন আচরণ কখনো মেনে যায় না।

শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর বাবা বাদশা মিয়া বলেন, ‘স্বৈরাচারের পতন হয়েছে আজকে প্রায় সাড়ে তিন মাস হতে চলল। শহীদ তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার একজন আসামিকেও প্রশাসন গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো আমাদের পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে।’

শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচা মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা রবিউল হাসান কর্নেল, আরকান শাহরিয়ার, মো. কাজল, শ্রমিক দল নেতা সরওয়ার আলম, চট্টগ্রাম যুব ক্যাবের সভাপতি মো. আবু হানিফ, ইসলামী ছাত্র শিবির নেতা নিয়াজ উদ্দিন দিনার, সৈয়দ সোহরাব সাহল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল ও হাজেরা তজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী মো. আফসান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের দ্বিমুখী হামলায় গুলিবিদ্ধ হন কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের বাদশাহ মিয়ার বড় ছেলে তানভীর সিদ্দিকি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আন্দোলনের সহযোদ্ধারা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। তানভীর পাঁচলাইশ আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।