পারিশ্রমিক বকেয়া থাকলে মিলবে না সার্টিফিকেট!
কারো পারিশ্রমিক বকেয়া থাকলে ওই সিনেমা মুক্তির সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না-এমনটাই প্রস্তাব রেখেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, সংস্কারের মাধ্যমে সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩-এ আরও কিছু ধারা যুক্ত করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
গতকাল বুধবার চলচ্চিত্রের অংশীজনদের নিয়ে তথ্য ভবনে এক কর্মশালায় নতুন এই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের অন্যতম সদস্য অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। বোর্ডের পক্ষে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল ও উপ-পরিচালক মো. মঈনউদ্দীন।
আয়োজিত কর্মশালায় নওশাবা জানান, একটি সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত থাকে। এর মধ্যে আছে- পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, চিত্রগ্রাহক, মেকআপশিল্পী, লাইটম্যান, প্রোডাকশন বয়সহ অনেকে। এদের মধ্যে কেউ যদি পারিশ্রমিক বকেয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন, তাহলে ওই সিনেমাকে সার্টিফিকেট না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আর এটি একটি ধারা হিসেবে সার্টিফিকেশন আইনে যুক্ত করার আহ্বানও জানান তিনি।
কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘আইনটিকে সংস্কারের মাধ্যমে আমরা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করতে চাই। প্রথমত কাস্ট অ্যান্ড ক্রুর পারিশ্রমিক, দ্বিতীয়ত প্রাণীকল্যাণ ও তৃতীয়ত তামাক ও প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা। এগুলো নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলব, তারপর সেটাকে আইনে যুক্ত করার অনুরোধ করব।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
প্রাণীকল্যাণ বিষয়ে প্রায় বিস্তারিত ব্যবস্থা প্রাণীকল্যাণ আইনে আছে, তবে চলচচ্চিত্র আইনে নেই। সে কারণে চলচ্চিত্র আইনে বিষয়টি যুক্ত করা জরুরি বলেও মনে করেন এই অভিনেত্রী।
তার কথায়, ‘১৯৪৯ সাল থেকে হলিউডে একটি নিয়ম চালু হয়- সিনেমায় পশুপাখি দেখানো হবে, সেটার শুটিং সেটে “হিউম্যান ইন হলিউড” নামের একটি ফোরামের প্রতিনিধি হিসেবে পশু-পাখি চিকিৎসক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। সিনেমাটি মুক্তির জন্য ওই প্রতিষ্ঠানটির সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। তারাই লিখিত দেয় যে, ছবিতে কোনো প্রাণীর ক্ষতি করা হয়নি। আমরা সে রকম একটি ব্যবস্থা নিতে চাই। শিগগিরই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে আলাপ করব।’
কর্মশালায় তামাক ও প্লাস্টিক বিষয়ক সচেতনা প্রচারের ক্ষেত্রেও প্রস্তাব রেখেছেন এই অভিনেত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সচেতনতামূলক একটা ভিডিও বিজ্ঞাপন তৈরি করে দেব। সবগুলো প্ল্যাটফর্মে সিনেমা বা সিরিজের শুরু, মাঝামাঝি ও শেষে সেটি দেখানোর আইন করে দিতে অনুরোধ করব। তাছাড়া আমরা সিনেমায় আর্ট ডিজাইনে প্লাস্টিকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সজাগ থাকারও নির্দেশনা রাখতে চাই।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩-এর ৫-এর ১২ উপধারার সঙ্গে আরো একটি উপধারা যোগ করা যেতে পারে। সেখানে লেখা যেতে পারে- যদি সার্টিফিকেশনের জন্য আবেদনকৃত কোনো চলচ্চিত্র পরীক্ষণে বোর্ডের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলো- যথা পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, মেকআপশিল্পী, লাইটম্যান, ক্যামেরাম্যান, সম্পাদক বা যে কোনো কলাকুশলী প্রযোজকের সঙ্গে তাদের সম্মানি বিষয়ে চুক্তিকৃত পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে বলে দাবি করেন এবং তারা যদি সার্টিফিকেশন বোর্ডে অভিযোগ করেন, তাহলে বোর্ড চলচ্চিত্রটির অনুকূলে সার্টিফিকেশন মঞ্জুর প্রত্যাখ্যান করিবে এবং এইরুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে উহা আবেদনকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করিতে হইবে।’
সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে শুদ্ধাচার অনুশীলন বিষয়ক ওই কর্মশালায় অংশীজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফডিসি, রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি, তামাক বিষয়ে সচেতনা সৃষ্টিতে কাজ করা সংস্থা, ফিল্ম আর্কাইভ, পিআইবির প্রতিনিধিরা।