মাসে অর্ধশত মেয়ের নিখোঁজ ডায়েরি হয় যে থানায়

বরুড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:২৬
শেয়ার :
মাসে অর্ধশত মেয়ের নিখোঁজ ডায়েরি হয় যে থানায়

কুমিল্লার বরুড়া থানায় মাসে ৬০ থেকে ৯০টি মেয়ে নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। নিখোঁজ মেয়েদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং স্কুলছাত্রী। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কোনো ছেলের সঙ্গে চলে গেছে। উদ্ধার কারার পর মেয়েরা জানায়, স্বেচ্ছায় গেছে এবং অভিযুক্ত ছেলেকেই বিয়ে করতে চায়।

বরুড়া থানা সূত্রে এমন তথ্য জানা যায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কাজী নাজমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

৩৩৩টি গ্রাম ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা গঠিত। উপজেলায় প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস। উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির পুরুষ সদস্যরা প্রবাসী। পুরুষ অভিভাবকের শূণ্যতায় পরিবারের সঠিক তদারকির অভাবেই সমাজে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় যে সাধারণ ডায়েরি থানায় হয় তার আবেদনকারীদের অধিকাংশই মেয়ের মা। সেখানে মেয়ের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় স্কুলছাত্রী। তবে শিক্ষার্থীদের বাহিরেও অনেক নাবালিকা নিখোঁজের ডায়েরি থানায় হয়, যারা লেখাপড়া করে না।

থানা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ছেলেদের সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে পুরুষ সদস্য না থাকায় নিরুপায় হয়ে মেয়ের মা থানায় এসে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কোনো কোনো পরিবার মান-সম্মানের ভয়ে স্বীকার করে না তার মেয়েটি কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।

গত ১২ নভেম্বর দশম শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া আক্তার (১৬) ও একাদল শ্রেণির সুমাইয়া আক্তার (১৮) নিখোঁজ ডায়েরি হয় থানায়। ৪ নভেম্বর খুকী ও আক্তার নামের দুজন ছাত্রী নিখোঁজের ডায়েরি হয় বরুড়া থানায়। ৭ নভেম্বর সুমাইয়া (১৪) ও রাইয়ান (১৪) নামের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় থানায়। এভাবে গত ১৫ দিনে ফাহিমা, নুরজাহান, শাহানারা, তপন্তী, রোকেয়া, খাদিজা, সেলিন,আয়শা, মেহেরুনসহ অনেকের নিখোঁজ ডায়েরি ও উদ্ধারের আবেদন করা হয়েছে বরুড়া থানায়। এর বাহিরে এমন অনেকের তথ্য পাওয়া যায়, যারা ছেলেদের সঙ্গে বাড়ি থেকে চলে গেলেও থানায় কোনো ডায়েরি করা হয়নি।

সামাজিক সংগঠন ‘ওরাই আপনজন’ বরুড়ার সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুকুল ইসলাম বলেন, মেয়েরা প্রেমে যেন প্রেমে জড়াতে না পারে বা পালিয়ে না যাওয়ার বিষয়ে পরিবারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসব ঘটনায় পরিবারিক ও সমাজিক ক্ষতি ছেলে-মেয়েদেরকে বোঝাতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। একাদশ শ্রেণির আগে শিক্ষার্থীদের মোবাইল থেকে বিরত রাখতে পারলে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া যাবে।

বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কাজী নাজমুল হক বলেন, প্রতিদিন ২-৩টি নিখোঁজ ডায়েরি হচ্ছে। অনুসন্ধান করলে জানা যায়, অধিকাংশই প্রেম সংঘঠিত ঘটনা। পুলিশ উদ্বার করে নিয়ে আসলে মেয়েরা বলে, ‘স্বেচ্ছায় চলে গেছি। তাকে বিয়ে করতে চাই’।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু এমং মারমা মং বলেন, ‘এ ধরণের ঘটনা মোকাবেলায় গণসচেতনতার বিকল্প নেই। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’