সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরালেন ফারুকী

অনলাইন ডেস্ক
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৫
শেয়ার :
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরালেন ফারুকী

চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়টির দপ্তর থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ তথ্য জানান কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী। 

তিনি লেখেন, ‘গতকালের ছবিতে যারা আমাদের মাথার উপর শেখ মুজিবের ছবি দেখেছেন, তাদের জানার জন্য বলছি যে, ফারুকী আজ তার অফিস তথা সংস্কৃতি মন্ত্রলায় থেকে ফ্যাসিবাদের আইকন শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। সম্ভবত সচিবালয়ে এই কাজ ফারুকীই প্রথম করলেন।’

শিবলীর স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

‘আমার সঙ্গে ফারুকীর সম্পর্ক ভাই ও বন্ধুর মত। এই সম্পর্ক প্রায় ২৫ বছরের পুরাতন। ফারুকীর স্ত্রী তিশা ও তার ভাই ইথেন আমার ছোট ভাই-বোনের মত। তাদের বাবা মা আমাকে সন্তানতুল্য আদর করতেন। সেই ফারুকী এখন কর্মসূত্রে আমার দপ্তরের মন্ত্রী। এই দুই সম্পর্কের কারনে আমার কাজের ক্ষেত্রটা অনেক সহজ হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে নজরুল ইনস্টিটিউট কোন চাকরির জায়গা না। নজরুল আমার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের হাতিয়ার। যে হাতিয়ার দিয়ে আমি ফ্যাসিবাদের ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নেমেছি। এই লড়াইয়ে আমার মত ফারুকীও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ফারুকী দোষেগুনে মেশানো একজন মানুষ। এই মন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্যতা তার আছে। অতীতে তার ফ্যাসিবাদের সাঙ্গে ঘেঁষাঘেসির যেমন প্রমাণ আছে, তেমনি তাদের বিরোধিতা করারও প্রমাণ আছে। আমি খুব ভালো করেই জানি আওয়ামী ফ্যাসিসদের দ্বারা সে কেমন নিগৃহীত হয়েছে।

জুলাইয়ের তীব্র দিনগুলিতে আমরা যখন আসহায়ের মত দেশের সেলেব্রিটি বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনের আশায় তাকিয়ে ছিলাম, তখন ২/১ জন ছাড়া আর কাউকে আমাদের পাশে পাইনি। সেই জুলাইয়ে ২/১ জনের মধ্যে ফারুকী ছিলেন একজন। ফারুকীর সেই সময়ের স্ট্যাটাসগুলো অনেক তরুণকে সাহস জুগিয়েছে। অনেকের মত সে চুপ থাকে নি। নিশ্চিত নিরাপত্তার জীবন ফেলে ফারুকী রিস্ক নিয়েছিল। জুলাই আন্দোলন ফেইল করলে আমাদের অনেকের মত ফারুকীর পরিণতিও ভয়াবহ হত। আমি ফারুকীর জুলাইয়ের ভূমিকার জন্য তার অতীত ভুলতে রাজি আছি। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল। 

আর এখন থেকে ভবিষ্যতের ফারুকী তো আমাদের নাগালের মধ্যেই থাকবে। আমি ইনসাফ থেকে কখনই নড়ব না ইনশাআল্লাহ। ফারুকী যতক্ষণ ইনসাফের উপর থাকবে ততক্ষণই সে আমার নেতা। ইনসাফ থেকে সরে দাঁড়ালে সবার আগে আমিই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব। ইনসাফের প্রশ্নে আমি কারও পরোওয়া করিনা। মনে রাখবেন আমি এই কথা যার জন্য বলছি পদাধীকার বলে তিনি এখন আমার বস। এবং তিনি আমার বন্ধু তালিকায় আছেন। 

গতকালের ছবিতে যারা আমাদের মাথার উপর শেখ মুজিবের ছবি দেখেছেন, তাদের জানার জন্য বলছি যে– ফারুকী আজ তার অফিস তথা সংস্কৃতি মন্ত্রলায় থেকে ফ্যাসিবাদের আইকন শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। সম্ভবত সচিবালয়ে এই কাজ ফারুকীই প্রথম করলেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ফারুকীর মধ্যে আমি সেই স্পিরিট দেখেছি– সে আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে ইনশাল্লাহ। আমরা একটু অপেক্ষা করি আর তার কর্মের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি সর্বদা আপনাদের ভালো পরামর্শ তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে ভুল বোঝার দরকার নাই।

এদিকে বঙ্গভবনের দরবার হল ছাড়াও সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তর থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তর থেকে বঙ্গবন্ধুর অন্তত ছয়টি ছবি সরানো হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার দপ্তরে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নেই।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের দপ্তর থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে বলে জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ বিল্লাহ জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন বস্ত্র ও পাট এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন শপথ নেওয়ার পর সোমবার সচিবালয়ে যান। এই উপদেষ্টা আসার আগেই তার দপ্তর থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের সরিয়ে ফেলা হয়।