‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে ফেসবুক, ঘটনা আসলে কী?

অনলাইন ডেস্ক
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০
শেয়ার :
‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে ফেসবুক, ঘটনা আসলে কী?

‘উই আর নাহিদ’ ও ‘উই আর উইথ নাহিদ’ হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগোযোগমাধ্যম ফেসবুক। লাল ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর #WeAreNahid #WeAreWithNahid লিখে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতা নাহিদ ইসলামের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দল ও মতের লোকজন।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নামে নানা অপপ্রচার ও গুজবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে লাল ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগ লিখে তার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিচ্ছেন নেটিজেনরা।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ‘উই আর নাহিদ’, ‘উই আর আসিফ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করা হয়েছে। আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, আগের কমিটির সমন্বয়ক আবদুল কাদের, মো. আবু বাকের মজুমদারসহ অনেকে নাহিদকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের প্রতিবাদ করে এ পোস্ট দেওয়া হচ্ছে।

এই বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ এক ফেসবুক পোস্ট করে লিখেছেন, ‘১৫ অক্টোবরের নিয়োগ ২২ অক্টোবরই বাতিল করা হয়েছিল। সুপারিশকৃত গোপন নথির ছবি যারা পেয়ে যায় তাদের কাছে বাতিলকৃত প্রকাশ্য নোটিশটি অজানা থাকার কথা না। তারপরও যেকোনো মূল্যে অসত্য প্রচার করে বিতর্কিত করাটা এই সময়ের রাজনীতি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘মূলত আওয়ামী বিরোধী ও আন্দোলনের পক্ষের একটি গ্রুপ এই ব্যক্তির সুপারিশ করেছিল। পরবর্তীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা উনার একাডেমিক এক্সেলেন্সি দেখে এনআইবি পদে নিয়োগ দেন। কিন্তু ঐ ব্যক্তির রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড জানার পরে সঙ্গে সঙ্গেই উনার নিয়োগ বাতিল করা হয়। গত মাসের ঘটনা। বাতিল করার ঘোষণাটিও সকলে অবগত আছেন।’

সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) মহাপরিচালক পদের নিয়োগপত্রে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সুপারিশসহ সই করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নাহিদ ইসলাম এ বিষয়টিকে অসত্য এবং বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে নাহিদ ইসলামকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সচিবালয়ের সামনে ছিলেন উপদেষ্টা নাহিদ। দেশের বাইরে থেকে একদল অপপ্রচারকারী ওই এডিটেড ভিডিও ছড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, এই স্লোগান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই দিয়ে আসছিলেন। মূলত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে। নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে নয়। এছাড়া দুর্নীতি এড়াতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চান তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হোক। এ জন্যই ইতিবাচক অর্থে ‘আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগের কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নাহিদ আসিফরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই রাজপথে নেমেছিল ৷ DGFI, DB'র পাশবিক অত্যাচার, কোনো কিছুই এদের টলাতে পারেনি ৷ হাসনাতরা আরো ৩ মাস আগেই বলেছিলো ‘we are open to be killed’। মাহিন সরকার, আবু বাকের মজুমদার, রিফাত রশিদ, হান্নান মাসুদদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই ৷ শেখ হাসিনার পুরো রেজিমের ভয় এদেরকে লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি ৷’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম আরও লেখেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লোগান ওদের পূর্ববর্তী করাপ্টেড সিস্টেম নিয়ে ছিল সেটা বুঝেছি। সহযোদ্ধাদের মধ্যে মান-অভিমান থাকতে পারে সেটা নিয়েও সমস্যা নেই। ন্যায়ের পক্ষে রাজপথের লড়াই সংগ্রাম মিনিটের মধ্যে আবার অমাদের ঐক্যকে শক্তিশালী করবে এটা আমরা বিশ্বাস করি। যখনই সংকট এসেছে আমার এই সহযোদ্ধারাই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে এসেছে। কিন্তু এজেন্ট হিসেবে ভেতরে ঢুকে এদের কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নোংরা প্রচেষ্টা যদি করা হয়, তবে সেটা কখনো সফল হবে না। এই বন্ধন এমনি এমনি তৈরি হয়নি। হতে হাত রেখে রাজপথে ঘাম ঝড়িয়ে, রক্ত ঝড়িয়ে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে একসাথে লড়াই করে এই বন্ধন তৈরি হয়েছে। সাবধান!’

এদিকে #WeAreNahid হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন জনপ্রিয় ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালমান মুক্তাদির। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই যে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারছো, কমপ্লেইন করতে পারছো, নিজের প্রফাইল থেকে সব শেয়ার করতে পারছো! কোয়েশ্চেন করতে পারছো। এটা ভুলে যাইও না। লাইফে কোনো দিন পারো নাই। এই ফার্স্ট পারছো। ভুলে যেও না। কমপ্লেইন করো। অবশ্যই করবা। কেনো করবা না। কিন্তু তুমি এই রেভ্যুলুশনকে কোনোদিন ইগনর করতে পারবা না। অস্বীকার করতে পারবা না। ইন অল অনেস্টি, আমি নাহিদকে চিনিও না, জানিও না। বাট আমি খুব ভালো করে জানি আমি অর আমরা কয়েকশ মানুষ আজকে এখনো বেঁচে আছি ওদের মতো মানুষের স্যাক্রিফাইসের জন্য। তাদের ছাড়া আমাদের অর্ধেকই এখন ভ্যানিস হয়ে যাবে। এইটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।’

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি লিখেছেন, ‘ডিবি অফিসে পেছন সাইট লাল নাহিদ ভাইয়েরই হয়েছিল। ডিবি হারুনের বানানো স্ক্রিপ্ট প্যান্ট পরেও পড়তে পারেনি সে। লুঙ্গি পরে পেপার হাঁটুর ওপরে রেখে বানানো স্ক্রিপ্ট পড়েছিল নাহিদ ইসলাম।’