ঘাটে ঘাটে নোঙর ফেলা জাফর এখন কূলহারা
ফরিদপুরে নিষিদ্ধ ঘোষণা
শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। চারবারের সাবেক এই সংসদ সদস্যকে একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবেই চিনতেন ফরিদপুরের মানুষ। আওয়ামী লীগ থেকে দুইবার এবং জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে একবার করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনএম থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারান। স্থানীয়রা বলেন, ফরিদপুর-১ আসনে অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন তিনি। তাই জনপ্রিয়তাও ছিল। কিন্তু শেষে নামসর্বস্ব একটি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিয়ে সব কূল হারিয়েছেন এই রাজনীতিক। এদিকে, গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে তাকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। সম্প্রতি ফরিদপুরে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, দক্ষিণবঙ্গে বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম একজন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। আওয়ামী লীগের টোপ গিলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে আজ তিনি হতেন এ অঞ্চলের বাঘা নেতা। অথচ তিনি এখন এলাকায় নিষিদ্ধ। লোভে পড়ে সব কূল হারিয়েছেন।
জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দেন শাহ আবু জাফর। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বিএনএম তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। বিএনএমে যোগ দিয়েই আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন তিনি। তখন কাছের মানুষদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ
প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফরিদপুর-১ আসনের এমপি বানাবে। এ জন্য তিনি নতুন দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ওই আসনে দলীয় প্রার্থী দিলে জামানত হারান আবু জাফর। তিনি ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পান। এ ঘটনায় মনোকষ্টে এলাকায় আশা বন্ধ করে দেন তিনি। এ ছাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের সাপোর্ট নেওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরাও তাকে বয়কট করে। সবশেষ ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
গত ৩০ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তা সংলগ্ন পুরনো বাসস্ট্যান্ডে শেখ হাসিনার ফাঁসি ও তার দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সমাবেশ করে বোয়ালমারী উপজেলা কৃষক দল। ওই সমাবেশ থেকে শাহ আবু জাফরকে হাসিনার দোসর আখ্যা দিয়ে ফরিদপুরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক। তিনি বলেন, আমাদের দলে একজন বেঈমান ছিলেন। তার নাম শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। এই লোভী উচ্ছিষ্টভোগী নেতা বিএনপির সঙ্গে বেঈমানি করে রাতের আঁধারে কিংস পার্টি খুলে হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাই তাকে এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এদিকে গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একদল দুর্বৃত্ত পৌর সদরের থানা মোড়ের উপজেলা প্রশাসন মার্কেট অবস্থিত বিএনএমের অফিসের তালা ভেঙে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা অফিসের চেয়ার টেবিল, আসবাবপত্র ও শাহ আবু জাফরের ছবি ভাঙচুর করে। এর আগের দিন বিকালে উপজেলা বিএনএমএ’র কার্যালয়টি উদ্বোধন করেছিলেন শাহ আবু জাফর। উদ্বোধনের ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা সেøাগান দিতে থাকে ‘খুনি হাসিনার দোসর শাহ জাফর নিপাত যাক’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে শাহ আবু জাফরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। এ দেশে গণতন্ত্রকে সুগম করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই সমান সুযোগ থাকা উচিত। আমার অফিস ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানাই, যারা এটা করেছে, তা তারা ঠিক করেনি।’
জানা গেছে, বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর দলটিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে পথচলা শুরু করেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। পরে ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে ফরিদপুর-১ আসন থেকে এবং ১৯৮৮ সালে একই আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ২০০৩ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর ২০০৫ সালে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।