২০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো আরাকান আর্মি
কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ মোহনা থেকে ধরে নিয়ে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশি জেলেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়েছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সদস্যরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট দিয়ে এদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন,‘ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিক আরাকান আর্মির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করে বিজিবি। অবশেষে আজ বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ ঘাট থেকে তাদেরকে ফেরত আনা হয়েছে এবং তাদেরকে স্ব স্ব অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
ফেরত আসা জেলেরা হচ্ছেন মো. হাসিম (৩০), মো. হোসেন (২০), মহি উদ্দিন (২২), এনায়েত উল্লাহ (৩২), আব্দুল শুক্কুর (৩৫), নুর হাফেজ (২২), মো. ইয়াছিন (৩০), আবদুর রহিম (২৪), হাসান আলি (৩৩), ওসমান গনি (৩০), শাহ আলম (২২), আসমত উল্লাহ (২০), আব্দুল শুক্কুর (২৬), আবুল হোসেন (১৭), আয়ুব খান (৩০), নুর হোছন (২২), মো. বেলাল (১৮), সলিম (২৭), আবদুল কাদের (২২) ও ইবনে আমিন (৩৫)। ফেরত আসা টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা।
ফেরত আসা এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর খুব আতঙ্কে ছিলাম। মনে করছিলাম আমাদেরকে মারধর ও নির্যাতন চালাবে, কিন্তু আমাদেরকে তারা কিছু করিনি। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াসহ সবকিছু দিয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাই বিজিবিকে কারণ দুদিন পর হলেও নিজ ঘরে ফিরে আসতে পেরেছি।’
নৌকার মালিক টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদেরকে ফেরত আনতে বিজিবি নিয়মিত আরকান আর্মিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আজ বিকেলে শাহাপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে ২০ জেলেকে নিয়ে এসেছে। তাই আমরা অনেক খুশি।’
ফেরত আসা জেলে ইবনে আমিনের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পরিবারে একমাত্র আয় করতো ছেলে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ এর আগে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে আমাদের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।’
স্থানীয় জেলে নুর আলম বলেন, ‘বারবার জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই মাছ শিকারে যাওয়া জেলেরা খুব ভয়ে আছেন। তা ছাড়া এ কারণে জেলে পরিবারগুলো দুচিন্তায় আছে। কখন যে এই মিয়ানমারের ধরে নিয়ে যাওয়া বন্ধ হবে তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘ধরেন নিয়ে যাওয়ার জেলেদের ফেরত এনেছে বিজিবি। জেলেদের ভুলের কারণে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধ থাকলেও জেলেরা তা অমান্য করে শিকারে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে আমরা জেলেদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি।’
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর সকালে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে সাগরে মাছ ধরতে যায় ছয়টি ট্রলারসহ ৫৮ জন জেলে এবং মাঝিমাল্লারা। তাদের ৯ অক্টোবর অপহরণ করে নিয়ে যায় দেশের নৌবাহিনী। এ সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিড বোট থেকে বাংলাদেশি একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে জেলেদের ফেরত দেওয়া হয়। তখন এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।