জয়ের সম্ভাব্য ৫ কারণ
কমলা
এখন অবধি যুক্তরাষ্ট্র কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেনি। কমলা হ্যারিস জয় পেলে তিনি হবেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। সেই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
১. কারণ তিনি ট্রাম্প নন
ট্রাম্পের সম্ভাবনা বেশি থাকা সত্ত্বেও এই রিপাবলিকান আসলে বিভাজনকারী নেতা, তা সবাই মোটা দাগে বোঝেন। ২০২০ সালে তিনি যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিলেন, আগে দলের অন্য নেতারা এত বেশি ভোট পাননি; কিন্তু তার চেয়েও ৭০ লাখ ভোট বেশি পড়েছিল বাইডেনের পক্ষে। এবার কমলা প্রচারসভায় যেসব কৌশল নিয়েছেন, এর একটি হলোÑ ট্রাম্প আবার ফিরলে কী ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হবে, তা নিয়ে আলোকপাত করা। তিনি ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
জুলাইয়ে রয়টার্স/ইপসোস জরিপে দেখা যায়, প্রতি পাঁচ আমেরিকানের মধ্যে চারজনই মনে করতেন দেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
২. তিনি বাইডেনও নন
পরাজয় অনিবার্য- এরকম একটা পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট-দলীয় প্রার্থী হিসেবে সরে দাঁড়ান বাইডেন। ট্রাম্পকে হারানোর আশা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বদলি প্রার্থী হিসেবে কমলাকে সমর্থন দেয় দল। তিনি শুরু থেকেই স্পষ্ট ভাষায় নিজের অবস্থান জানিয়ে প্রচার আরম্ভ করেন। এতে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। বাইডেনের অজনপ্রিয় নীতির অনুসারী হিসেবে কমলাকে অভিহিত করে থাকেন রিপাবলিকানরা। তবে বয়সের তফাতের কারণে জরিপগুলোয় কমলা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন বলে মনে হয়।
৩. নারী অধিকার নিয়ে সরব
আরও পড়ুন:
৬০০ দিন পর কারামুক্ত কাশ্মীরের সাংবাদিক
যেসব ভোটার গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে, তারা নিশ্চিতভাবেই কমলাকে সমর্থন দিচ্ছেন। ২০২২ সালের মিডটার্ম নির্বাচনেও দেখা গেছে, এই ইস্যুটি ভোটের হার ও ফলাফলে প্রভাব ফেলে। এবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনাসহ মোট দশটি রাজ্য ভোটারদের কাছে জানতে চাইছে, গর্ভপাত ইস্যুতে তাদের কী মত। ফলে এসব রাজ্যে কমলার পক্ষে ভোট বেশি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করতে পারে অনেক নারী ভোটারের ভোট।
৪. শিক্ষিত ও প্রবীণ ভোটার
কমলার বেশি ভোট কলেজ-শিক্ষিত ভোটার ও প্রবীণ ভোটার এবং এই দুই শ্রেণির ভোটারের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার প্রবণতা বেশি। আগে থেকেই ডেমোক্র্যাটরা বেশি সংখ্যায় ভোট দেওয়ার নজির আছে।
৫. তহবিল ও ব্যয়
আমেরিকার নির্বাচন যে ব্যয়বহুল, তা সবারই জানা। এবার আরও বেশি খরচ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি খরচ করছেন কমলা। তার তহবিলে জমাও পড়েছে সবচেয়ে বেশি টাকা।
ট্রাম্প
ট্রাম্প জিতলে তা আমেরিকার ১৩০ বছরের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে। কারণ এই সময়ের মধ্যে একবার নির্বাচনে পরাজিত আর কোনো প্রার্থী পরের নির্বাচনে লড়ে প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।
১. তিনি ক্ষমতায় নেই
ভোটারদের কাছে নিশ্চিতভাবে অর্থনীতিই এক নম্বর বিষয়। বেকারত্ব বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। বেশির ভাগ মার্কিন ভোটারের নাভিশ^াস। এ রকম মুদ্রাস্ফীতি সত্তরের দশকের পর আর দেখা যায়নি। ফলে প্রচারসভায় গিয়ে ট্রাম্প এই প্রশ্নটা ঠিকঠাক করতে পেরেছেনÑ ‘চার বছর আগে যেমন ছিলেন, এর চেয়ে কি বেশি ভালো আছেন আপনারা?’ ২০২৪ সালে যেসব নির্বাচন হয়েছে বিশ^জুড়ে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভোটাররা ক্ষমতাসীন দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর একটা কারণ কোভিড-১৯ পরবর্তী জীবনযাপনের ব্যয়বৃদ্ধি। মার্কিন ভোটাররাও সম্ভবত মুখিয়ে আছেন বদলের আশায়।
২. খারাপ খবরেও তার কিছু আসে যায় না
ক্যাপিটল হিলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব অপরাধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের জনসমর্থন সারা বছর ৪০ শতাংশ বা তার উপরে স্থিতিশীল রয়েছে। ডেমোক্র্যাট ও ‘নেভার ট্রাম্প’ বলে পরিচিত রক্ষণশীলরা বলে থাকেন, ট্রাম্প অফিসের জন্য অযোগ্য। তবে বেশির ভাগ রিপাবলিকান মনে করেন, ট্রাম্প বলেন সত্যি সত্যি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, যেমনটি সাবেক এই প্রেসিডেন্ট দাবি করে আসছেন।
৩. অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কড়া সুর
অর্থনীতির বাইরে আবেগেরও একটা প্রভাব আছে মার্কিন নির্বাচনে। যেমন- ডেমোক্র্যাটরা গর্ভপাত নিয়ে প্রচার-রাজনীতি করেন। রিপাবলিকনরা তা করে অভিবাসন নিয়ে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে সীমান্তে যে পরিমাণ অভিবাসী ঢুকেছে, সেই কারণে জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসন ইস্যুতে ভোটাররা ট্রাম্পকে বেশি বিশ^াস করেন।
৪. কম শিক্ষিত ভোটার
আরও পড়ুন:
প্রথম নারী বিচারপতির মৃত্যু
ট্রাম্পের অন্যতম প্রচার সাফল্য হলো- তিনি মার্কিন রাজনীতিতে প্রান্তিক ও কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও ভোটারকে টানতে পেরেছেন। যেমন ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত আসনগুলোয় ইউনিয়ন শ্রমিকদের তিনি রিপাবলিকান দলে ভেড়াতে সমর্থ হয়েছেন।
৫. অস্থিতিশীল বিশে^ শক্তিশালী মানুষ
তার সমালোচকরা বলে থাকেন, স্বৈরশাসকদের সুরে ট্রাম্প মার্কিন মিত্রদের খাটো করেছেন। তাকে যে ঠিক মতো বোঝা যায় না, এটাই আসলে ট্রাম্পের মূল শক্তি। এটাও খেয়াল রাখতে হবে, তিনি যখন হোয়াইট হাউসে ছিলেন, ওরকম বড় কোনো যুদ্ধে আমেরিকা জড়ায়নি। ইউক্রেনে ও ইসরায়েলে যে বিশাল অঙ্কের অর্থ আমেরিকা বিনিয়োগ করছে, এ নিয়ে বিভিন্ন কারণে অনেক মার্কিন নাগরিক ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, বাইডেনের নেতৃত্বে আমেরিকা দুর্বল।