কমলার ইতিহাস নাকি ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ। কঠিন এই লড়াইয়ে কে জিতবেন, সেদিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ^। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়ী হলে তিনি দেশটির ২৩৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনন্য রেকর্ড গড়বেন। আর যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকানদলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হন, তবে তিনি গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, যিনি মেয়াদ শেষে নির্বাচনে হেরে গিয়ে চার বছর পর আবারও জয়ী হয়েছিলেন। জনমত সমীক্ষা বলছেÑ ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে কমলার। এখন দেখার বিষয়, কমলা নতুন ইতিহাস গড়বেন নাকি ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ঘটবে।
বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৮৯ সাল থেকে ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনা ছাড়া চার বছর পরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে দেশটিতে। দেশটির ৫০টি প্রদেশ মিলিয়ে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন। ক্ষমতা দখল করতে প্রয়োজন হয় ২৭০টি ভোট। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, জনগণের ভোট বেশি পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনো প্রার্থীকে। ২০০০ ও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যাল গোর এবং হিলারি ক্লিনটন। সাতটি ‘দোদুল্যমান রাজ্য’Ñ অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনও ট্রাম্প ও কমলার ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৫ বছরের গণতান্ত্রিক চর্চার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো নারী দেশটির প্রেসিডেন্ট হননি। গত জুলাইয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন। এর মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হন কমলা হ্যারিস। এবার কমলা হ্যারিস জয়ী হলে তিনিই হবেন দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। নারীর ক্ষমতায়নের এটা একটা মাইলফলক হয়েও থাকবে।
তবে কমলার এই ইতিহাস গড়ার পথে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকানদলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরের মেয়াদে আবার হেরে যান তিনি। তবে এবার যদি জিতলে দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন ট্রাম্প। সেক্ষেত্রে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পর ট্রাম্পের নাম লেখা থাকবে ইতিহাসে, যিনি মেয়াদ শেষে নির্বাচনে হেরে গিয়ে চার বছর পর আবার জয়ী হন। ক্লিভল্যান্ড পরাজিত হওয়ার পর আবারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরপর নয়, আলাদা দুটি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন (১৮৮৫-১৮৮৯ এবং ১৮৯৩-১৮৯৭) ক্লিভল্যান্ড। মাঝের চার বছর (১৮৮৯-১৮৯৩) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসন। ক্লিভল্যান্ডই প্রথমবারের মতো এমন সফলতা দেখিয়েছিলেন ১৮৯৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে। ১৩১ বছরের পুরনো সেই রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি ট্রাম্প? যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারেন না। তাই তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নেই। দেশটির সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টরা সর্বাধিক দুই মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন। দেশটির ইতিহাসে পরপর দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরবময় কৃতিত্ব রয়েছে জর্জ ওয়াশিংটন, থমাস জেফারসন, উড্রো উইলসন, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামার। তবে পরাজিত প্রেসিডেন্টের ফের নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে শুধু ক্লিভল্যান্ডের। প্রতিবারের নির্বাচনে কিছু বৈশ্বিক ইস্যু থাকে, যা নির্বাচনের মাঠে প্রভাব ফেলে। এবার এ ধরনের ইস্যুর মধ্যে বিশ্বে চলমান দুটি বড় যুদ্ধ ইউক্রেন-রাশিয়া এবং ইসরায়েল ও হামাস-হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংঘাত অন্যতম আলোচিত ইস্যু।
আরও পড়ুন:
৬০০ দিন পর কারামুক্ত কাশ্মীরের সাংবাদিক
লড়ছেন আরও যে চার প্রার্থী
জিল স্টেইন
গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ৭৪ বছর বয়সী জিল স্টেইন এর আগে ২০১২ ও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছিলেন। ওই সময় তিনি দশমিক ৪ শতাংশ ও ১ শতাংশ করে ভোট পেয়েছিলেন। ৭৪ বছর বয়সী চিকিৎসক ও পরিবেশকর্মী জিল স্টেইন এবার ৪০টি অঙ্গরাজ্যে লড়ছেন।
কর্নেল ওয়েস্ট
গ্রিন পার্টি থেকে জিল স্টেইন ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন কর্নেল ওয়েস্ট। বর্ণবাদবিরোধী ৭১ বছর বয়সী এ শিক্ষাবিদ বাইডেনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ ও ট্রাম্পকে ‘নব্য ফ্যাসিস্ট’ বলে মনে করেন।
চেজ অলিভার
লিবার্টারিয়ান পার্টি ২০২০ সালের নির্বাচনে ১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিল। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় সবকটিতেই লড়ছেন দলটির প্রার্থী চেজ অলিভার।
আরও পড়ুন:
প্রথম নারী বিচারপতির মৃত্যু
রবার্ট জুনিয়র কেনেডি
এবারের নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। তার পক্ষে এবারের নির্বাচনে ৫৭ শতাংশ সমর্থন ছিল; কিন্তু গত আগস্টে তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।