কার্যালয়ে আটকে রেখে ব্যবসায়ীকে পেটানোর অভিযোগ এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় এক কাপড়ের দোকানিকে তুলে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসিল্যান্ড আবু বকর সিদ্দিক।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মডেরহাট বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছোট একটি কাপড়ের দোকান চালিয়ে আসছিলেন চর ধানকাটি এলাকার সোলাইমান ফরাজী। গত বৃহস্পতিবার বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় তিনি সোলাইমান ফরাজীর কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স চাইলে তিনি প্রথমে ফটোকপি ও পরবর্তীকালে মূল কপি দেখান।
এরপর তার কাছে আয়কর সার্টিফিকেট চাইলে সেটি তিনি দেখাতে পারেননি। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেন। তবে ক্ষুদ্র দোকানি হওয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সোলাইমান ফরাজীর সঙ্গে এসিল্যান্ড আবু বকর সিদ্দিকের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আনসার সদস্যকে দিয়ে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
অভিযোগ আরও উল্লেখ করা হয়, সেখান আটকে রেখে প্রথমে ওই ব্যবসায়ীতে কানে ধরে উঠবস করান। পরবর্তীতে আনসার ও তিনি নিজে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এদিকে খবর পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও পৌর জামায়াতের আমির আতিকুর রহমান কবির ঘটনাস্থলে গেলে তাদের অনুরোধে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় আজ সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কাপড়ের দোকানি সোলাইমান ফরাজী।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে এসিল্যান্ডের অফিসে ছুটে যাই। তিনি আমাদের সামনেই সোলাইমান ফরাজীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও একপর্যায়ে লাঠি নিয়ে এসে আনসার সদস্যকে মারতে বলেন। আনসার তাকে পেটানো শুরু করে এবং তিনি (এসিল্যান্ড) নিজে উঠে এসেও পেটানো শুরু করেন। কেউ ভুল করলে তাকে ভয় দেখানো যায়, জরিমানা করা যায়, কিন্তু একজন কর্মকর্তা এভাবে নিজ হাতে আইন তুলে নিয়ে মারতে পারেন, যা কল্পনাও করিনি। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। যাতে পরবর্তীতে কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে না পারেন।’
সোলাইমান ফরাজী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি গ্রামের ক্ষুদ্র একজন ব্যবসায়ী। যখন আমাকে জরিমানা করা হয়, আমি শুধু বলেছিলাম- আমরা গ্রামের দোকানদার, তাই আয়কর সার্টিফিকেট রাখি না। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিস কক্ষে নিয়ে কানেধরে উঠবস করান। পরে তার আনসার সদস্য দিয়ে আমার সারা শরীরে লাঠি দিয়ে পেটায়। তিনি নিজেও আমাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তিনি আমার সাথে অমানুষিক আচরণ করেছেন, আমাকে মেরে জখম করেছেন। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডামুড্যা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বিলিং লাইসেন্স আনতে হয়। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী লাইসেন্সটি ছাড়াই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন। তাকে আইনগতভাবে কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে তিনজন জামায়াতে নেতার অনুরোধে তাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ ঘটনার তদন্তে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’