অপরিকল্পিত উন্নয়নে সংকটে বন্যপ্রাণী

নোমান বিন হারুন, জাবি
০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
অপরিকল্পিত উন্নয়নে সংকটে বন্যপ্রাণী

অপরিকল্পিত উন্নয়নের বলি হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) বন্যপ্রাণীরা। জলাশয় ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করে হচ্ছে নতুন নতুন আবাসিক ও একাডেমিক ভবন। ধীরে ধীরে আবাসস্থল হারাচ্ছে শিয়াল, বনবিড়াল, গুইসাপসহ নানা রকম বন্যপ্রাণী। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ^বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগরে এক এক সময় খরগোশ দেখা যেত। গত দুই দশকে সেগুলো বিলুপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে গুইসাপের সংখ্যা। বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলছেন, দ্রুত উদ্যোগ না নিলে শিগগিরই এটি ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যাবে।

বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘গুইসাপ বিভিন্ন জায়গায় উইপোকার ডিবিতে ডিম দিয়ে বাচ্চা দেয়। এই সাপ কমে যাওয়ার প্রধান দুটি কারণ খাদ্য সংকট ও ডিম দেওয়ার জায়গা ধ্বংস করা।’সম্প্রতি মীর মশাররফ হলসংলগ্ন এলাকায় বিশালায়তন স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে শিয়াল, গন্ধগোকুল, বাঘডাস ও বনবিড়ালের মতো বন্যপ্রাণীরা। প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার জানান, ২০১৯ সালে লকডাউনের সময় জিমনেসিয়াম, মীর মশাররফ হল, আলবেরুনি হলের মাঠের এলাকায় পাতিশিয়াল দেখা যেত। তিন বছর আগেও যেখানে প্রতিটি দলে দেখা যেত ১২-১৭টি শিয়াল, এখন সেখানে ৪টির অধিক দেখাই যায় না। প্রকৃতিগতভাবে শিয়াল কখনো সাঁতার কাটে না। কিন্তু খাবারের খোঁজে শিয়ালকে লেকে সাঁতার কেটে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে দেখা গেছে। অনেক জায়গায় শিয়াল ও কুকুর একসঙ্গে খাবার খাচ্ছে।

একই সমস্যায় ভুগছে এখানকার বনবিড়াল ও বাগডাস। ক্যাম্পাসে তিন প্রজাতির বাগডাস পাওয়া গেলেও বর্তমানে শুধু বড় বাগডাস চোখে পড়ে। বাইরের সীমানাপ্রচীরের কারণে তারা ক্যাম্পাস থেকে বিএলআরআই ও ডেইরি ফার্মে যেতে পারছে না যা তাদের খাদ্যগ্রহণে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তিনি আরও জানান, পাতিশিয়ালের অভিযোজন ক্ষমতা বেশি বলে তারা হয়তো বিলুপ্ত হচ্ছে না। তবে দিনযাপন, প্রসবের স্থান ও খাবার অন্বেষণের স্থানগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তারা ঝুঁকিতে রয়েছে।

জানা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মোট ২১টি স্থাপনা নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে। কোনো ধরনের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) না করে ও রাজউকের অনুমোদন না নিয়েই নির্বিচারে ক্যাম্পাসের বনভূমি উজাড় ও জলাভূমি ভরাট করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

ডিপ ইকোলজি ও স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন, জাবি শাখার সেক্রেটারি সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া আমাদের সময়কে বলেন, জাবিতে চলমান অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এই ক্যাম্পাসের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। লেকগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়া, লেকগুলোতে মাছ চাষ, যানবাহনের শব্দ ইত্যাদি কারণ রয়েছে। বন্যপ্রাণীদের বিচরণ অক্ষুণ্ন রাখতে হলে পরিবেশগত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাজেদা বেগম বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন আছে। তবে মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করে জীববৈচিত্র্যের কথা বিবেচনায় রেখে তা করা উচিত।