হিজলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ

বরিশাল ব্যুরো
০২ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৪৯
শেয়ার :
হিজলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ

বরিশালের হিজলায় অর্ধশত স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় ৫-৬ জন স্বাস্থ্যসহকারী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী এসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোসা. সোনিয়া আক্তার।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাজেদুল হক কাওছার এবং মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মো. লোকমান হোসেনের অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাত, টেন্ডারবিহীন হাসপাতাল চত্বরের গাছ বিক্রি ও নারী কেলেংকারীর ঘটনায় করা অভিযোগের তদন্ত চলাকালে অভিযোগকারী অর্ধশত স্বাস্থ্যসহকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হিজলা উপজেলায় কর্মরত অর্ধশত স্বাস্থ্য সহকারী গত ২৯ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইমরান হোসেন, সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা জাহিদা আনোয়ার মুন্নী ও প্রধান অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম। আজ দুপুরে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তদন্তে আসে তদন্তকারী দল। তাদের আগমনের খবরে সকাল থেকে অভিযোগকারী সকল স্বাস্থ্য সহকারীরা অবস্থান নেন হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন শুরু করেন তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া মাববন্ধনে হঠাৎ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতর্কিত হামলা চালায় স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ১৫-২০ জনের একটি দল।

স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক শাহজালাল রাজিব ও একটি ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বহিরাগতদের হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মানববন্ধন। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলায় ৫-৬ জন স্বাস্থ্য সহকারী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে হিজলা কলেজ সেনা ক্যাম্প থেকে একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় পালিয়ে যান হামলাকারীরা।

এদিকে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর অভিযোগ তদন্তে আসা দল হাসপাতালে পৌঁছায় এবং বিকেল পর্যন্ত হাসপাতাল অভ্যন্তরে অবস্থান করেছেন। তবে তদন্ত দল তাৎক্ষণিক কিছু বলতে রাজি হননি।

স্বাস্থ্য সহকারীরা অভিযোগ করেন, তাদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু দুর্নীতিপরায়ন টিএইচও স্থানীয় বিএনপির একটি গ্রুপকে অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করে তাদের ওপর হামলা করিয়েছে। এ সময় তারা বিএনপির হাইকমান্ডকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

হামলার নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদল নেতা শাহজালাল রাজিব ও রিপ্রেজেন্টেটিভ সাইফুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাজেদুল হক কাওছার বলেন, ‘হামলার সাথে আমি বা আমার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত নয়। আমি আমার কক্ষে বসে ডাক-চিৎকার শুনে প্রথমে পুলিশ ও পরে সেনা ক্যাম্পকে জানিয়েছি। তারা এসে বাহিরের পরিস্থিতি শান্ত করেছে।’

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে সেনা সদস্যদের সাথে যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। হাসপাতাল এলাকায় পুলিশ অবস্থান করছে।

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের ওপর হামলা হলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।