এতিমের গরু বিক্রি করে অর্থ লুটে নিলেন বিএনপি নেতারা
গাজীপুরের শ্রীপুরে এক দরিদ্র পরিবারের গরু বিক্রি করে অর্থ লুটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই কামরুল ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত রবিবার (২৭ অক্টোবর) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সচেতন মহলে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
অভিযুক্তরা হলেন- কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. বাবলু সরকার, তার ছোট ভাই শ্রমিকদল নেতা কামরুল ইসলাম, তাদের সহযোগী একই গ্রামের ইব্রাহীম, রাণা, রমজান-১, রমজান-২, ওসমানসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।
ভূক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ফকির (৬৫) ও তার স্ত্রী জামিনা খাতুন জানান, জাহাম্মদ পেশায় ঝাড়ু বিক্রেতা। ঝাড়ু বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার পরিচালনা করেন। গত রবিাবর ভোর ৬টার দিকে স্থানীয় ইব্রাহীম ফোন করে জাহাম্মদকে জানান, আল আমীন নামের তার এক আত্মীয় মেয়েসহ আটক হয়েছেন। খবর পেয়ে জাহাম্মদ স্থানীয় তারকাটা বাজারে যান। সেখানে ইব্রাহীম ও তার সহযোগীরা আল আমিনকে ছেড়ে দিতে টাকা দাবি করেন। ওই সময় আল আমিন টাকা দিতে অপারগ হন। পরে আল আমিন ও তার প্রেমিকা স্মৃতিকে ছেড়ে দিতে ১০ হাজার টাকার দিতে হবে বলে জাহাম্মদ আলীকে জিম্মাদার করা হয়। ওইদিন বিকেলের মধ্যে আল আমিন টাকা দিতে না পারায় অভিযুক্তরা জাহাম্মদ আলী ও আল আমিনকে তারকাটা বাজারে ডেকে নেন।
এ সময় অভিযোগ দেওয়া হয়, জাহাম্মদ আলীর বাড়িতে ওই প্রেমিক জুটিকে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। এ অভিযোগ এনে তারা বৃদ্ধ জাহাম্মদকে নির্যাতন করেন। এ সময় জাহাম্মদ আলীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দবি করেন অভিযুক্তরা। পরে তা কমিয়ে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। দরিদ্র জাহাম্মদ টাকা দিতে না পারায় ব্যবসায়ীকে ডেকে জাহাম্মদের বাড়ির গরু বিক্রি করে তারা টাকা নিয়ে নেন।
জাহাম্মদের স্ত্রী জামিনা খাতুন জানান, এতিম নাতি রাকিবুলের বিয়ের জন্য একটা গরু পালন করছিলেন। তাদের ইচ্ছে ছিল, গরুটা বিক্রি করে নাতি রাকিবুলের বিয়েতে খরচ করবেন। কিন্তু অভিযুক্তরা গরুটা বিক্রি করে তার হাতে ৬ হাজার টাকা দেন এবং বাকি টাকা তারা নিয়ে যান।
মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দরিদ্র পরিবারটির গরু বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
গোড়ার (গরুর খাবার খাওয়ার স্থান) সামনে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে জাহাম্মদ বলেন, ‘একমাত্র এতিম নাতি রাকিবুলকে একটি গরু কিনে দিয়েছিলাম। গরুটি লালন পালন করছিলাম, বড় করে তার বিয়ের টাকা যোগাড় করব। সে ভাগ্য হলো না। বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে আমাকে নির্যাতন করল, এরপর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। মিথ্যা অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গরু বিক্রি করে টাকা ভাগ করে নেয় তারা।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা বাবলু সরকারকে ফোন করলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচারণ করেন।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মমিনুল কাদের বলেন, ‘আমার নিকট থেকে আটক যুবক-যুবতীর অভিভাবকগণ স্বাক্ষর করে নিজেদের জিম্মায় নেন। ওই জিম্মানামায় জাহাম্মদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে গরু বিক্রির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল হক মন্ডল বলেন, ‘বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ এমন অপরাধ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’