জেনারেটরের তারে জড়িয়ে বন্যহাতির মৃত্যু, কৃষক আটক

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৪
শেয়ার :
জেনারেটরের তারে জড়িয়ে বন্যহাতির মৃত্যু, কৃষক আটক

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে জেনারেটারের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি মাদি বন্যহাতি মারা গেছে। উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাতকুচি রাবার বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় কৃষক শহিদুল ইসলামকে (৪০) আটক করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে বন্যহাতিটাকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে মাটিতে পুঁতে রাখে বন বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হাতিটির মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক বছর আগে কৃষক শহিদুলের বাবাকে বন্যহাতির দল পা দিয়ে পিষে হত্যা করেছে। শহিদুল তার সীমান্তবর্তী ধানক্ষেত জেনারেটারের বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ঘেরা দিয়েছিলেন। এতে জঙ্গল থেকে নেমে আসা হাতির দল বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে যায়। বন কর্মকর্তারা জেনারেটরটি জব্দ করেছেন।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে প্রায় ৪০-৫০টি হাতির একটি দল অন্তত দুইযুগ ধরে ফসলের মাঠে ও ঘরবাড়িতে তান্ডব চালিয়ে এলাকার মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি রাবার বাগান এলাকায় খাবারের সন্ধানে আসে হাতির দল। এসময় কৃষকের আমন ধানক্ষেতে নেমে পড়ে হাতি। উঠতি আমন ফসল বাঁচাতে গ্রামের কৃষকরা আগে থেকেই ধানক্ষেতের আশপাশে একটি জেনারেটর স্থাপন করে জিআই তারের মাধ্যমে রাতে লাইট জ্বালিয়ে রেখেছিল।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো দেখলে বন্যহাতির দল নাকি ধানক্ষেতে তান্ডব চালাতে আসতে ভয় পায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে কোনো ভাবেই ক্ষুধার্ত হাতিগুলোকে দমানো যাচ্ছিল না। হাতিগুলো খাবারের সন্ধানে ওই এলাকার ধানক্ষেতে নেমে আসায় জেনারেটরের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই ১০-১২ বছর বয়সী একটি মাদি বন্যহাতি মারা যায়। একপর্যায়ে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে বাকি বন্যহাতিগুলো সেইস্থান ত্যাগ করলে গ্রামবাসীরা এগিয়ে গিয়ে দেখেন, সেখানে একটি মাদি বন্যহাতি জেনারেটরের তারে শক খেয়ে মারা গেছে।

শেরপুর সহকারী বন সংরক্ষক ও মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেনারেটর স্থাপন করে বন্যহাতি হত্যার অভিযোগে শহিদুল ইসলামকে আটক ও আরও অজ্ঞাত ১০/১২ জনের নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা করেন।

ভুক্তভোগী কৃষক ফারুক হোসেন, মনছুর আলী, সুরুজ আলী, জাহেদ আলী ও কৃষাণী আমেনা বেগম জানান, বন্যহাতির দল প্রায় প্রতিরাতেই তাদের পাহাড়ি এলাকায় তান্ডব চালিয়ে ফসলের ও ঘরবাড়ির ক্ষতি করে। সরকারিভাবে অনেকেই ক্ষতিপূরনও পেয়েছেন। এসব ক্ষতিপূরনের টাকা পেতে অনেক সময় লেগে যায় ও হয়রানির স্বীকার হতে হয়।

শেরপুরের সহকারী বনসংরক্ষক মো. সাদেকুল ইসলাম খান বলেন, বন্যহাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ সকালে সরেজমিন পদির্শন করেছি। সেখানে জেনারেটর স্থাপন করে বন্যহাতি হত্যা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগে শহিদুল ইসলাম নামের একজনকে আটক ও একটি জেনারেটর জব্দ করা হয়েছে। এর সাথে জড়িত সন্দেহে আরও ১০-১২ জনের নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে শেরপুর আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। একই সাথে সন্দেহভাজন বাকি আসামিদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরন দিচ্ছি। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কোনোক্রমেই বন্যহাতিকে হত্যা করা যাবে না।’