ত্রি-বিভক্ত জাসদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তার সঙ্গে মতভিন্নতার জেরে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা সে সময় দল থেকে বেরিয়ে যান। তারা সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর গঠন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
গত ৫২ বছরের পথপরিক্রমায় এই দল ভেঙে ৪টি দল হয়েছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাতীয় সমাজতন্ত্রিক দল-জেএসডি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ আর বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। এ নামেই নিবন্ধিত হয় দলগুলো। এর মধ্যে বাসদ ছাড়া বাকি তিনটি দলের নেতারাই মনে করেন, তাদের প্রতিষ্ঠা ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর। এমন পরিস্থিতিতে আজ ৩১ অক্টোবর তিনটি দলই পৃথকভাবে তাদের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনাসভা করবে জেএসডি। অন্যদিকে বিকাল ৪টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনাসভা করবে বাংলাদেশ জাসদ। এছাড়া হাসানুল হক ইনু বর্তমানে কারাগারে এবং তার দলের নেতারাও পলাতক। তাই দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ভার্চুয়ালি উদযাপন করা হতে পারে কিংবা গোপনে তাদের আলোচনাসভাও হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
রাজনীতিসংশ্লিষ্ট কারও কারও মতে, একটি দল ভেঙে নতুন করে দল গঠন এবং নতুন সেই দলের নামে নতুন করে নিবন্ধন নিয়ে পৃথক অফিস থেকে পৃথক ব্যানারে রাজনীতি করার পরও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের ক্ষেত্রে সবগুলো দল একই সময়কে কীভাবে বিবেচনায় আনে? এক্ষেত্রে মূল জাসদ ও নতুন জাসদের ফারাক কোথায়?
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের (ইনু) নেতারা মনে করেন, তারাই মূল জাসদ। আর যারা ওই দল ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের নতুন করেই হিসাব করা উচিত। অন্যদিকে জেএসডি ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা মনে করেন, সবার বয়স ৫২ বছর; নানা বিবেচনায় দলকে রিফর্ম করা হয়েছে মাত্র। নির্বাচন করার প্রশ্নে নিবন্ধন করতে গিয়ে নতুন নাম দিতে হলেও জাসদের মূল আদর্শ থেকে কিন্তু কেউ বিচ্যুত হয়নি।
বর্তমানে যারা বিভিন্ন নামে জাসদের রাজনীতি করছেন তাদের প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ছিলেন। ওই সময় জাসদের প্রতীক ছিল মশাল। ৮ বছরের মাথায় অর্থাৎ আশির দশকে এসে জাসদে ভাঙন হয়। এখান থেকে কিছু নেতা গিয়ে বাসদ গঠন করেন। এর কয়েক বছর পর আসম আবদুর রব জাসদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে জেএসডি গঠন করে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেন। পরবর্তীতে আবার
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জাসদে ফেরেন তিনি। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। আবার জেএসডি নামেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। এরপর থেকে আজ অবধি ওই নামেই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন (তারা প্রতীক, নিবন্ধন নম্বর ১৫) নিয়ে রাজনীতি করছেন। অন্যদিকে ২০১৬ সালের আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নামে হাসানুল হক ইনু ও শরীফ নুরুল আম্বিয়া এক সঙ্গে (মশাল প্রতীক, নিবন্ধন নম্বর ১৩) রাজনীতি করেন। তারা একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলে ছিলেন। ২০১৬ সালের কাউন্সিলে মতবিরোধ হওয়ায় দলটি ভেঙে যায়, গঠিত হয় বাংলাদেশ জাসদ। কিন্তু ভেঙে যাওয়া দুটি দলই ১৪ দলের শরিক হিসেবে থেকে যায়। পরবর্তীকালে শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ ১৪ দল থেকে বেরিয়ে যায়; থেকে যায় হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ। মশাল প্রতীক ইনুর জাসদেরই থাকে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নিয়ে বাংলাদেশ জাসদ (মোটরগাড়ি প্রতীক, নিবন্ধন নম্বর ৪৭) রাজনীতি করছে।
জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক আসম আবদুর রব বলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুক্তি সংগ্রামের আকাক্সক্ষাভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এর নামকরণ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সবকিছু নির্ধারণ করেছিলেন আমাদের রাজনৈতিক ও নৈতিক অভিভাবক সিরাজুল আলম খান। বঙ্গবন্ধুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দল গঠন, দলের বিস্তার, সংগ্রাম আন্দোলন রচনা করার দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড আজকের বাস্তবতায় উপলব্ধি করাও বেশ কঠিন।
জাসদ ভেঙে ভিন্ন নামে দল হয়েছে, নিবন্ধনও হয়েছে। এর পরও কেন আপনারা সবাই ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছেন? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আমরা ভিন্ন নামে দল রিফর্ম করেছি কিন্তু আমাদের সবার বয়স এক। সবার জন্ম ’৭২ সালের ৩১ অক্টোবর। তারপর রাজনীতির ভিন্ন মোড়ে এসে বিভক্ত হয়েছে। কেউ যদি পূর্ববর্তী ভূমিকাকে ডিজ্ওন (অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান) না করে, তাহলে অসুবিধা কোথায়? যেহেতু একই নামে দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া যায় না, তাই নামের চেঞ্জ করতে হয়েছে। তার ভাষ্য, বাংলাদেশ জাসদ ২০১৬ সালে আলাদা নামে জন্ম নিলেও এটা মূলত ওই জাসদ-ই। ‘মানব মুক্তি’র যে উদ্দেশ্য, তা থেকে তারা বিচ্যুত হননি, রিফর্ম করেছে মাত্র।