জমি নিয়ে বিরোধে দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
রংপুর মহানগরীর বাবুপাড়া কয়েকদিন থেকে প্রভাবশালী দুই গ্রুপের জমিজমা দখল নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। যে কোনো মুহুর্তে বড়ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুইপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর প্রসক্লাব হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন মো. আসলামের পক্ষে এডভোকেট মো. ইসহাক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আসলাম ও তার ছেলে আরমান ও শামীম। এর আগে গত শনিবার আসলাম গংয়ের বিপক্ষে রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে জুয়েল হোসেন।
জুয়েল হোসেনের দাবি ব্যক্তি মালিকানার ক্রয়কৃত সম্পত্তি তাদের। অপরপক্ষ আসলামের আইনজীবী এসাহাকের দাবি এটি জেলা প্রশাসক নিলামে কেনা সম্পত্তি তার মক্কেলের। এই মালিকানা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। স্থানীয়দের দাবি সমস্যা নিরসন না হলে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে এলাকায়। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেখানকার জনমনে রয়েছে এখনো শঙ্কা।
পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের পর সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উৎখাত হয়ে যাওয়া আওয়ামী সরকার আমলের ২০১৪ সালে বিতর্কিত নিলাম দেখিয়ে বাবুপাড়ায় অবস্থিত সোনালী ফ্লাওয়ার মিলসের স্বত্বাধিকারী হাজী আসলাম গং একই ওয়ার্ড পীরপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত নুর মোহাম্মদ উরফে লালু মিয়ার ক্রয় করা জলাশয় ভরাট করে জবর দখলে নেয়।
সেই জমি পুনঃ উদ্ধার করতে গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সকালে লালু মিয়ার ছেলে জুয়েল হোসেনসহ তার পরিবারের লোকজনেরা স্কেভটর ভাড়া করে নিয়ে ভরাট পুকুর খনন করতে গেলে উভয়ের মধ্যে ঘটে বাকবিতণ্ডা। এরই এক পর্যায়ে সেনাসদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে স্কেভটরটি জব্দ করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় জুয়েল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘এই এলাকার জমিদার পরিবার হাজী তছির উদ্দিনের থেকে আমার বাবা নুর মোহাম্মদ উরফে লালু মিয়া বিগত ১৯৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দলিল মূলে ৩০ শতাংশ ও বায়না সূত্রে আরও ২৩ শতকসহ মোট ৫৩ শতক জলাশয়সহ জমি ক্রয় করে নিজ নামে রেকর্ড ও নামজারি করে মাছ চাষ করে আসেন। বিগত ২০০১ সালে লালু মিয়া মারা গেলে আমি নিজেই মাছের চাষ করি ওই জলাশয়ে। যা লালু মিয়ার দিঘি নামে বেশ পরিচিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ হাজী আসলামগং হঠাৎ ২০১৪ সালে রংপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক দাবি করা নিলামের বিতর্কিত কাগজপত্র দিয়েই মাছভর্তি ভরাপুকুরে মাটি ভরাট করে জবরদখল করেন।’
লালু মিয়ার ওয়ারিশ গোলাম মোস্তফা, সবুর খানসহ শাহারিয়া খানম শিউলি বেগম প্রতিপক্ষের মালিকানা কাগজপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দেখিয়ে ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ আসলামগংদের নিলামের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য গত ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুসন্ধান ফরম পুরণ করে তথ্য চাইলে কর্তৃপক্ষ লিখিত আকারে বর্ণনা দিয়ে জানান ওই ধরনের কোনো নিলাম হয়নি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে।’
এই ঘটনার বিষয়ে একাধিক স্থানীয় জানান, উৎখাত হওয়া সরকারী দল আওয়ামীলীগ নেতাদের আঁতাতে প্রশাসনের কথিত লোকজনকে অর্ধকোটি টাকা দিয়ে গত ২০১৪ সালে জুয়েলগংদের ভোগ দখলে থাকা সম্পত্তি জবরদখল করে নেয় তারা।
তবে অপর পক্ষ সোনালী ফ্লাওয়ার মিলসের স্বত্বাধিকারী হাজী আসলাম উদ্দিনের ছেলে ইরফান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি দাবি করে বলেন, ‘১৯৯০ সালে আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পৃথক তিন দাগে ৭০ শতক জমি নিলামে ক্রয় করি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে লোকজন এসে লাল পতাকা লাগায়া বুঝায় দিয়ে গেছে। আমার যতটুকু জানা এখানে তসীর উদ্দিনের পুকুর ছিল সেটা দেখার লোকজন রেখেছিল। তারাই একটা বায়না দলিল মারফতে মামলা রুজু করে, আমরা সেটার রায় পেয়ে যাই। রায় পাওয়ার পর আমরা ভোগদখল করে আসছি। ২০১৩ সালে আবার পুকুর ভরাট করে মাপযোগ করলাম তখন তারা আবার একটা মামলা রুজু করে। আমরা ২০১৬ সালে সেই মামলার রায় পাই। পরে আমরা চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা করি ২০১৯ সালে। সেটারও রায় পাই তার কপি আছে আমাদের কাছে।’
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদের খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাই এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করি। তবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো পক্ষেই লিখিতভাবে অভিযোগ দেইনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’