মমেক হাসপাতালে আন্দোলনে আহত ৫ জনকে মারধর, থানায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
২৯ অক্টোবর ২০২৪, ২১:০৮
শেয়ার :
মমেক হাসপাতালে আন্দোলনে আহত ৫ জনকে মারধর, থানায় মামলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত ৫ জনকে মারধর করেছেন প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মীরা। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাত দেড়টার দিকে মমেক হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।

এ সময় ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মহানগর ও জেলা ছাত্রদলসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করা হয়।

মারধরের ঘটনায় আহতরা হলেন- হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সোহেল (২২), সাগর (১৮), হৃদয় (২৪), শামীম (২২) এবং নাজমুল (৩০)। 

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার সময় হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ট্রলিবয় রূহান হোসেন রূপু একজন রোগী নিয়ে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত এক রোগী লাইট জ্বালাতে নিষেধ করলে ট্রলিবয় রূপু আহত রোগীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে কথা কাটাকাটি করেন। এক পর্যায়ে রূপু অন্য ট্রলিবয়দের ডেকে এনে আহতদের মারধর করেন।

হাসপাতালের এ ঘটনা নিয়ে আউটসোর্সিংয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের টেন্ডার বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. আশিকুর রহমান আশিক ও গুকুল সূত্রধর মানিক।

তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিস্টদের দোসর সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের ঠিকাদার আবুল হাসেম এবং মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও শহীদ সাগর হত্যা মামলার আসামি আসাদুজ্জামান রুমেলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি করে চলছে। টেন্ডারবাজী থেকে শুরু করে রোগীদের খাবারে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। মূলত ওই সিন্ডিকেটটি হাসপাতালের ভেতরে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য তাদের অনুগত উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের আউটসোসিংয়ে নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করছে। অবিলম্বে সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের টেন্ডার বাতিল করে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং নেপথ্যের মদদদাতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। 

সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিসের ঠিকাদার আবুল হাসেম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যারা মারধরের সঙ্গে জড়িত তারা আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মী। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

ময়মনসিংহের জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শামীম হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ছাত্র সমন্বয়কসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত রূহান হোসেন রূপু (২০) এবং মোশারফ হোসেনকে (৩৬) আটক করে সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে জড়িত অন্যদের বিচারের আওতায় আনা হবে। 

রবিবার গভীর রাতে চিকিৎসাধীন আহত রোগীদের মারধরের ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মাইন উদ্দিন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। সেই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, রোগীদের মারধরের ঘটনার সঙ্গে টেন্ডার বাতিলের কোনো সর্ম্পক নেই। তারপরও ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।