অবশেষে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘কুন্ডুবাড়ির মেলা’

মাদারীপুর প্রতিনিধি
২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৩৪
শেয়ার :
অবশেষে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘কুন্ডুবাড়ির মেলা’

নানা আলোচনা-সমালোচনার পর মাদারীপুরের কালকিনিতে দীপাবলি ও কালীপূজা উপলক্ষে প্রায় ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘কুন্ডুবাড়ির মেলা’ আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে। চারস্তরের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুন্ডুবাড়িতে এ মেলা শুরু হবে। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।  

জানা গেছে, অশ্লীলতা, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়াসহ ৯টি অভিযোগ থাকায় ‘এ বছর ২০২৪ থেকে কুন্ডুবাড়ির মেলা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো’ এমন ব্যানার পৌর এলাকার বিভিন্নস্থানে টানিয়ে দেওয়া হয়। ব্যানারটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনাটি নিয়ে পুরো জেলাসহ সারাদেশ জুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। 

মেলার বিষয় নিয়ে গতকাল রবিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এবং কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিস কার্যালয়ে আলেম সমাজ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কয়েকদফা সভা করে প্রশাসন। পরে উপস্থিত সবার সম্মতিক্রমে সভা শেষে পূজা উদযাপন কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ দিনের অনুমোদন দেওয়া হয় এ মেলার। এতে খুশি স্থানীয়দের পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটি। তবে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে এ মেলার ইজারা বাতিল করে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবেন প্রশাসন। অপরদিকে, মেলাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রশাসন। 

সভায় উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল সেনানিবাসের কর্নেল তারিক মাহমুদ, লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ, কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, মেজর মো. মুনতাসীর মামুন গৌরব ও ক্যাপ্টেন আবু আমিন প্রমুখ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুন্ডুবাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দীপাবলি ও শ্রী শ্রী কালীপূজা উপলক্ষ্যে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডুদের বংশের নামানুসারে এই মেলা নামকরণ করা হয় কুন্ডুবাড়ির মেলা। এই সময় দীপাবলির পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন কালী প্রতিমা জড়ো করা হত। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সেরা হতো তাদের পুরস্কার করা হত। সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, কবিগান, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হত।  

কালের বিবর্তনে পালাগান জারি গান, নৌকাবাইচ বন্ধ থাকলেও নাগর দোলার আয়োজন এখনো আছে। বংশপরম্পরায় প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে শুধু কুন্ডুুবাড়ি জুড়ে নয় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে এ মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। 

মেলার আবেদনকারী স্বপন কুন্ডু বলেন, ‘চলতি বছরে আমাদের এ মেলা নিয়ে একটু সমস্যা তৈরি হলেও আমরা এ মেলার অনুমোদন পেয়েছি, তাই আমাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। তবে দীপাবলি ও শ্রী শ্রী কালীপূজা উপলক্ষে আমাদের পূর্ব পুরুষরা মাত্র ৪ একর জমির উপর এই মেলার আয়োজন করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা বিস্তৃতি হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর এই মোলায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। তবে এ বছর মেলাকে কেন্দ্র করে সর্বক্ষণিক চারস্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবেন।’

এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলার ইউএনও উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘প্রথমে মেলা নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হলেও সেই সমস্যা কেটে গেছে। পূজা উদযাপন কমিটি, সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মেলা পরিচালিত হবে। মেলায় আগত দোকানী, দর্শণার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে প্রশাসন। সবার সম্মতিতেই এবার সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে কুন্ডুবাড়ি মেলা।’