নির্মাতাদের এক অঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয়

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবিয়াল

ইশতিয়াক আহমেদ
২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
নির্মাতাদের এক অঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয়

৯৯ থেকে ২৪, আলী ফিদা একরাম তোজো, মারজুক রাসেল থেকে এক বুক আশা নিয়ে নিকেতনের অফিসে সবে যেতে শুরু করা সদ্য তরুণ সবাই ছবিয়াল নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যেখানে নির্মাণ শেখানো হয়। যেখানে শেখানো হয়েছে দেশের প্রথাগত নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনের ব্যাকরণ ভাঙার কৌশল। যেখানে শেখানো হয়েছে নতুনভাবে গল্প বলা, নতুন ভাষারীতি এবং নতুন দিনের সিনেমার দর্শন। সে সিনেমা দেখলে দুনিয়াজোড়া দর্শক বাংলাদেশের নিঃশ্বাস টের পাবে। এই যে প্রথা ভাঙার চিন্তা, ভিন্ন পথে হাঁটার চেষ্টা ছবিয়ালের মাধ্যমে যিনি করেছেন তার নাম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলা সিনেমার নতুন দিনের বিজ্ঞাপন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন যিনি।

এই যে ২৫ বছরের গল্প। এটা মোটেও সহজ ছিল না একজন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর জন্য। একটা নতুন ভাষা তৈরিতে প্রথম সামাজিকভাবে যে পরিমাণ বাধা আসে তার সবই এসেছে তার এই দীর্ঘ পথচলায়। তিনি কথা শোনেন না, তিনি বাংলা ভাষার সর্বনাশকারীসহ আরও শতাধিক দোষে অভিযুক্ত হলেন। তাকে একঘরে করে দেওয়া, নিষিদ্ধ করার দাবি কিংবা জীবননাশসহ আরও কত হুমকি। কিন্তু তিনি অবিচল ছিলেন বলেই সম্ভব হয়েছে এতদূর আসা। যার ফলে তার ছবিয়াল হয়েছে নির্মাণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা থেকে বের হয়ে এসেছে বর্তমান ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় রাজত্ব করা শীর্ষ নির্মাতারা। যাদের মধ্যে ইফতেখার আহমেদ ফাহমী, রেদোয়ান রনি, মোস্তফা কামাল রাজ, আদনান আল রাজীব, আশফাক নিপুণ, শরাফ আহমেদ জীবন, হিমেল আশরাফ, মাহমুদুল ইসলাম অন্যতম।

পঁচিশ বছরের অনেক প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানও এতটা সফল না এই দেশে যতটা ছবিয়াল হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ, ফারুকীর নিজের বেড়ে ওঠা এবং তার সঙ্গে থাকা ভাইব্রাদারদের টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা। কারণ তিনি যখন দেখলেন, তার ভাইব্রাদারদের মধ্যেও নির্মাণের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে তখন তাদের জন্যও তার হাত প্রসারিত করলেন, উন্মুক্ত করলেন তাদের জন্যও কাজের ক্ষেত্র। একটি বেসরকারি চ্যানেলে করলেন ‘ছবিয়াল উৎসব’। ফলে নিজ নিজ ভাবনাতে কাজ করতে পেরে তারাও আলাদা ভাষা তৈরি করে এই বাজারে জায়গা করে নিল। শুধু তাই নয়, প্রথম প্রজন্ম ছাড়াও তিনি দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুণদের জন্যও তৈরি করে দিলেন একই সুযোগ, ছবিয়াল রিইউনিয়ন নামে। ফলে সেখান থেকেও সাহস নিয়ে যাত্রা করল নির্মাণের এক নতুন কাফেলা। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে এসেছে ফাহাদ খান, মমিন বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মুক্তাদির, মাহমুদুল হাসান আদনান, নাজমুল নবীন, নাজিম পলাশ, শাহরিয়ার সজীব, শফিক হীরা। যারাও এখন যথেষ্ট সরব। আরও বড় ব্যাপার, তার প্রথম প্রজন্মের নির্মাতাদের সহকারী হিসেবে এসে কাজ শুরু করাও মিডিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্বপ্রতিভায়। যাদের মধ্যে থেকে এই ইন্ডাস্ট্রি পেয়েছে ইমরাউল রাফাত, মাবরুর রশীদ বান্নাহ, ইমেল হক, কাজল আরেফিন অমি, জিয়াউল হক পলাশ, আশিকুর রহমান, মোহন আহমেদদের। সবকিছু নিয়েই মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তার ছবিয়াল এক বিশাল হৃদয়ের প্ল্যাটফর্ম। যেখানে তারুণ্যের কোনো ট্রেন এসে খালি হাতে ফেরেনি। সেখানে একদল শিখেছে নির্মাণ আর যারা নির্মাণটা আয়ত্ত করতে পারেনি তারা শিখে গেছে জীবন বিনির্মাণের কৌশল।