‘অর্থনৈতিক সংস্কার টেকসই করার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার’

অনলাইন ডেস্ক
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৩১
শেয়ার :
‘অর্থনৈতিক সংস্কার টেকসই করার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার’

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের ‘অর্থনৈতিক নীতিমালা’ বিষয়ক আলোচনাটি আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। 

আলোচকদের মধ্যে ছিলেন- সিপিডির ডিস্টিংগুইস ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিজিএস’র চেয়ার মুনিরা খান, অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শাহিদুল ইসলাম জাহিদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারম্যান ও এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, এফবিসিসিয়াই’র স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আব্দুল হক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সবুর খান, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সাবেক সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা, এফবিসিসিয়াই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন, সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশিজের চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালেহ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্রভা সুবহা জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাদিক মাহবুব ইসলাম।  

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ধারাবাহিকতা ভেঙে যে এই সরকার এসেছে এই উপলব্ধি আমি অনেকের মধ্যে দেখতে পাইনি। আমলারা কিভাবে রাজনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কিভাবে ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী কিভাবে রাজনীতিবিদ হয়ে গেল এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো না কেন? এই দুষ্টচক্র নিয়ে কথা বলেনি কেউ। বিগত পনের বছরে কায়েমি স্বার্থের সাথে একীভূত হয়ে গেলো সবকিছু তা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। জাতীয় আয়, মূল্যস্ফীতি, খানা জরিপ, রপ্তানি আয় এগুলোর সঠিক তথ্য কেন সামনে আসলো না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসহায় করে ফেলা হলো, আইন প্রণেতারা কিভাবে স্বার্থভোগী হয়ে উঠলো তা নিয়ে কথা বলা হলো না। ’

তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক, নির্বাচনী সংস্কারের সাথে সাথে অর্থনীতির বিষয়ে সংস্কারেও মনোযোগ দিতে হবে। দেশের মধ্যে নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতা আনয়ন করতে হবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে সমন্বয়তা নিয়ে আসা প্রয়োজন। অর্থনীতির ভিত্তি রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি। ব্যক্তি, গোষ্ঠীর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ব্যক্তির ওপর ব্যবস্থা নিলে তার অর্থনৈতিক তাৎপর্য থাকে। আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে না বইতে হয় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটা মুহূর্তে জবাবদিহিতা না থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না।’

মুনিরা খান বলেন, ‘দেশের বাইরে অর্থ পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মিডিয়ার ভূমিকা আছে দেশের অর্থনীতির দুর্বলতা নিয়ে কথা বলায়। মিডিয়া যখন দেশের ব্যাংকগুলোকে দুর্বল বলে তালিকাবদ্ধ করে তখন সেখান থেকে টাকা সরিয়ে ফেলার প্রবণতা উল্টো বেড়ে যায়, টাকা পাচারের প্রবণতাও বাড়ে। এতে ব্যাংকগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। আমরা যৌক্তিক সমালোচনা করব, দেশের অর্থনীতি অথবা সরকারকে বিপদে ফেলে নয়।’

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন তার বেশিরভাগ অংশই আসে আমদানির মাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমাবেন এমন আশা করা অনুচিত। সকল সামাজিক সংস্থাকে একত্রীকরণ করা উচিত। জনগণের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। পূর্বোক্ত সরকারের বাজেট এখনো চলছে কেন? এই প্রশ্ন করছেন না কেন? বাজেট কেন নবায়ন করা হলো না? আমরা ঋণ নিচ্ছি কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করছি না। প্রফেসর ড. ইউনুসকে ব্যবহার করে ঋণ নিতে পারছি, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আসতে পারছি না। রাজনৈতিক বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে না যা খুবই দুঃখজনক।’

পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, ‘সামনের দুই বছরে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে এরকম আশা আমাদের ছেড়ে দিতে হবে। ৪৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বন্ধে শ্রমিকদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সমাধানের আগে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। হু হু করে মাথাপিছু ঋণ বেড়েই যাচ্ছে। আমরা ঋণ নিয়েই যাচ্ছি, এগুলো তো আমাদেরই আদায় করতে হবে। আবেগ দিয়ে বিশ্বজয় করা যায় না। নির্বাচনের মাধ্যমে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে। ’

ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্র ও মধ্যম ধরনের উদ্যোগে বিনিয়োগ প্রয়োজন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ট্রেড লাইসেন্সসহ সহজ নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তথ্য প্রবাহ বাড়ানো প্রয়োজন। কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে আমাদের কাজ করতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকারি ব্যবস্থাকে উৎসাহ দিতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে কাজ করতে হবে, বিভিন্ন এলাকায় কর্মক্ষেত্র তৈরি করার মাধ্যমে ঢাকামুখীতা কমাতে হবে। আর্থিক, রাজস্ব, সরকারি খাতগুলোতে মনোযোগ দিলে অনেকাংশে সংকট উত্তরণ করা সম্ভব হবে। ’

শাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে আমরা বের হতে পারিনি। জনবান্ধব প্রকল্প বলতে আমরা কি বুঝি? পূর্বাচল প্রকল্পকে আমরা উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারি। পরিবেশ ধ্বংস করে যে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করি, এর পরিণাম আমরা চিন্তা করিনি। ইচ্ছাকৃতভাবে যারা ঋণী, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করা প্রয়োজন। সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করা উচিত। ব্যাংকগুলোকে সবল করতে হলে খেলাপি ঋণ আদায় করা শুরু করতে হবে।’

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘সরকারি চাকুরিতে মাত্র ৫ শতাংশ তরুণ সমাজ আসছে। বাকি যত শতাংশ কর্মক্ষম তরুণ তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিভেদ তৈরি করেছে এদেশে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সঞ্চয়ের প্রয়োজন। বেকারত্ব বাড়লে বহুমুখী সমস্যা শুরু হবে, সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে, গ্যাং সংস্কৃতি তৈরি হবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক না হলে, কোন সংস্কারেই কোনো কাজ হবে না। গণতান্ত্রিক সরকার আসলে অর্থনীতিসহ অন্যান্য সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।’

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ‘উন্নয়ন নিয়ে যত কথা হয় কর্মসংস্থান নিয়ে তত কথা হয় না। ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হচ্ছে না বিধায় আমরা আমাদের জায়গা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। নীতিমালা প্রণয়ন ও কর্মসম্পাদন দুইটা আলাদা কাজ। আইনশৃঙ্খলার উপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। কর্মনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘এর আগেও সংস্কারের সুযোগ আসলেও ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা না থাকলে দ্রব্যমূল্য বা ব্যবসার খরচ না কমে বরং বাড়বে। সরকার ও রাজস্ব কর্মকর্তারা কাজ না করলে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে না। এদেশে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন হয়েছে, ডিরেক্ট ট্যাক্স হয়ে গেছে ইনডিরেক্ট। এই চক্র ভাংতে হলে সারা বছর ট্যারিফ নিয়ে কথা বলতে হবে। ট্যারিফ কমিশন সত্যিকার অর্থে কাজ করে না, তাকে তার কাজ করতে হবে।’

মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোনো কোনো সমস্যার প্রথমেই সমাধান করা উচিত তার একটি তালিকা প্রয়োজন। পণ্য সরবরাহ, অবকাঠামোগত জায়গায় কাজ করা প্রয়োজন। খোলা বাজারে যত্রতত্র বেচাকেনার জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার জন্য আগে ব্যাংকের নীতিমালা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। আলাদা আলাদা ইন্ডাস্ট্রির জন্য আলাদা নীতিমালা প্রয়োজন। নীতিমালা প্রণয়নে ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলেই কোন নীতিমালাই ফলপ্রসূ হয়নি।’

শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ‘ঘুষ ছাড়া আজকাল কোনো ব্যবসা হয় না। এই ধরনের ঘুষের রাজনীতি তরুণদের সামনে ভাল উদাহরণ তৈরি করছে না।’

আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে তরুণদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের জন্য ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে হবে। তরুণদের সামনে নিয়ে আসতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জায়গাগুলোতে তরুণদের অংশগ্রহণের জন্য স্থান তৈরি করতে হবে। তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হলে বেকারত্বের হার কমানো সম্ভব হবে। পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজানো উচিত। ব্যাংক একত্রীকরণ অদূর ভবিষ্যতে খুব একটা ভাল ফল বয়ে আনবে না। সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করলে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’

আব্দুল হক বলেন, ‘অর্থনীতিতে আগে যে সহযোগিতার সংস্কৃতি ছিল তা এখন নেই। ব্যাংক ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য একত্রীকরণ ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে আমি মনে করি না। ক্ষুদ্র ও মধ্যম উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করতে হলে, তরুণদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হলে, এজেন্সি তৈরি করা প্রয়োজন।’

সবুর খান বলেন, ‘কথায় কথায় বলছি ঋণ খেলাপি, যারা ঋণ নিচ্ছে তাদের ট্যাক্স ফাইল কেন দেখা হয় না? বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন ক্রেডিট স্কোর এর পরিচয় করানো হচ্ছে না? কারা কথা না বলে কাজ করতে পারে, তাদের আগে খুঁজে বের করে কাজ দেওয়া দরকার। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন।’

প্রসেনজিৎ চাকমা বলেন, ‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ক্রেতার সাথে বিক্রেতাদের সরাসরি সংযোগ তৈরি করা। রাজস্ব আদায়ে জনগণকে উৎসাহ দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য জেলার আদিবাসীদের অবস্থা খারাপ। আদিবাসীদের অবস্থার উন্নয়নে, বৈষম্য নিরোধে তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করতে হবে।’

মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, দুর্বৃত্তায়ন নিয়ে কথা না বলতে পারি তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ব্যবসায়ীরা নীতিমালায় সম্পৃক্ত না হওয়ার কা রণে তার ফল আমরা পাচ্ছি না। শিক্ষানীতি পুনরায় প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশ্বাস নেই মানুষের। ’

এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘ডলার সংকটের জন্য দায়ী অর্থ পাচার। অর্থ পাচারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন গভর্নর পালিয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে। ট্রেড লিডার এর সিন্ডিকেশন বন্ধ না হলে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বিরোধী মতাদর্শের নেতা হলেই সরকার পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করে তাদের কাজ করতে দেওয়া হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে।’

ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘যে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ করি তা সঠিক হওয়া প্রয়োজন। জরিপের তথ্য সঠিক না হওয়ায় আমরা কাজ করার সুযোগ পাই না। সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে কাজ করছি, তা আমাদের বাজেটের কত শতাংশ তা নিয়ে কথা বলা উচিত। যারা ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের ওপর প্রেশার দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু যারা ট্যাক্স দিচ্ছে না তাদের ম্যাপে আনা হচ্ছে না। ’  

সালেহ আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থা যতদিন ঠিক না হবে ততদিন পর্যন্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঠিক হবে না। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দেওয়া যা এই দেশের মেরুদণ্ড।’

জিল্লুর রহমান আলোচনার শুরুতে বলেন, ‘সংস্কার শব্দটি আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত একটি শব্দ, এক সময় যা ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে অর্থনৈতিক খাতের লুটপাটের কথা আমরা সবাই জানি। দেশের টাকা চুরি করে দেশের বাইরে চলে গেছে যা সংকটকে আরও গুরুতর করেছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের সরকার হিসেবে এই সরকারকে কাজ করতে হবে। কাগজ কলমে নয় মননে আমাদের সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।’

সুপ্রভা সুবহা জামান বলেন, ‘অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল এই জুলাই আন্দোলন। বিগত সরকারের বর্ণনায় দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে শুনেছিলাম কিন্তু আমরা শিক্ষাক্ষেত্র, চাকরিক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন দেখতে পাইনি। তরুণদের যে চাহিদা তা পূরণ হয়েছে কি না, অর্থনৈতিক নীতিমালা আসলে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করা প্রয়োজন। এই তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে, রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা আমরা হারাতে চাই না। ’ 

সাদিক মাহবুব ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, নিজেদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা। সরকারি চাকরি নিয়ে যে উন্মাদনা এইটা হওয়ার কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে প্রাইভেট সেক্টর সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকারের সংস্কার ব্যবস্থা এখনো দৃশ্যমান নয় এবং তরুণদের কথা সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে না।’