জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে চব্বিশের গণবিপ্লব: জামায়াত আমির
রাজনীতিতে বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছর ইতিহাসে রাজনীতিবিদরা এই স্লোগান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর নগপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গাজীপুর জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত দলের রোকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম আর এই ব্যর্থতা দেখতে প্রস্তুত নয়। তারা চায় যে, রাজনীতিবিদদের সফল হতেই হবে। জাতির সাথে দেওয়া সমস্ত কমিটমেন্ট অবশ্যই তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। এই জন্য আমাদের বার্তা পরিষ্কার। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ২৪ এর গণবিপ্লব। এই গণবিপ্লবের চেতনা কে পাস কাটিয়ে আমাদের দল এবং কোনো দল যেন ভিন্ন পথে হাঁটার চিন্তা না করে। যারাই হাঁটবেন তাদেরকেই স্বৈরাচারের রাস্তা ধরতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার দলকে সতর্ক করছি এবং সকল রাজনৈতিক দলকেও সতর্ক করছি। জনগণের চেতনার বিপক্ষে আমরা যেন কেউ না দাঁড়াই। আমাদেরকে অবশ্যই জনগণের পক্ষে শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবি যদি থাকে সে দাবিকে পাশ কাটানোর চেষ্টা বা দুঃসাহস আমরা যেনো কেউ না দেখাই। কিন্তু হ্যা, যদি জনগণের মধ্য থেকে কোন একটি বিশেষ মহল জাতিকে ধোকা দেওয়ার জন্য, প্রতারণা করার জন্য কোন কিছু নিয়ে আসে সেই ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য।’
জেলা জামায়াতের আমীর ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ রোকন সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মোঃ সফি উদ্দিন, জেলা নায়েবে আমীর আব্দুল হাকিম ও মাওলানা সেফাউল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারী আনিসুর রহমান বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান, মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নায়েবে আমীর খায়রুল হাসান সহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জামায়াত আমীর বলেন, ‘জাতি ধর্ম দল মত নির্বিশেষে বাংলাদেশ আমাদের সবার। প্রিয় দেশ শান্তিতে থাকবে, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকবে, মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে, প্রতিটি নাগরিক মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। আমরা চাই দেশে প্রবাসে যারাই আছেন, তারা একজন গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে যেনো নিজের পরিচয় স্বানন্দে প্রকাশ করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে, কলিজার টুকরা এই ছেলেমেয়েদের প্রধান দাবি ছিল, উই ওয়ান্ট জাস্টিস-আমরা সুবিচার চাই। সুবিচার যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে ডাকাত এবং চোরের কোনো জায়গা নেই। সেখানে সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে পাচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে ঘোষের রমরমা বাণিজ্য চলবে না।’
তিনি বিগত সরকারের নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আগের সরকারের মন্ত্রীরা, এমনকি অর্থমন্ত্রী একসময় বলত, ঘুষকে এখন ঘুষ বলা ঠিক হবে না, এটাকে স্পিড মানি বলতে হবে। তারা ঘুষকে এভাবে জাতীয়করণ করেছিলেন ঘোষণা দিয়ে। আরেক মন্ত্রী বলতেন, ‘‘আমার মন্ত্রনালয়ে ঘুষ খাবেন, কিন্ত একটু কম করে নিয়েন”।’
জামায়াত আমীর বলেন, ‘আমরা এমন বিচিত্র সংসদ এবং সরকার পেয়েছিলাম, সেই সংসদ এবং সরকার জনগণের জন্য ছিল না। সেখানে ব্যক্তি বন্দনায় নেচে গেয়ে জনগণের টাকা নষ্ট করা হতো। এক ব্যক্তির ইশারায় সবকিছু উঠতো এবং বসতো। ইতিহাসে এমন দুর্ধর্ষ শাসক যারা ছিল, স্বৈরশাসক যারা ছিল, তারা বলত আমি হচ্ছি সবচেয়ে বড় রব।’
